আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুর হবে বলে জানাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
Published : 02 Nov 2023, 11:03 PM
চট্টগ্রামে আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে ‘আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে’ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেড়শ শয্যার বিশেষায়িত এ হাসপাতাল নির্মাণে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে গত ১৩ মার্চ। বৃহস্পতিবার এর অগ্রগতি জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসেন চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি দল।
শুরুতে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর হাসপাতাল সংলগ্ন গোঁয়াছিবাগান এলাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করেন।
সেসময় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং বার্ন ইউনিট সমূহের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা আমাদের বহুদিনের চেষ্টা। প্রায় ১২ বছর। আমার আলাদা ‘সফট কর্নার’ আছে এখানে। আমি এখানকার ছাত্র। এটা আমাদের স্বপ্ন।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই প্রকল্প নিয়ে একটা সভা হবে। আজ চীনের প্রতিনিধি দল এসেছেন। উনারা যা দেখে যাবেন, সেটা তাদের কমার্স মিনিস্ট্রিতে জানাবে। আশা করি আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু করবে।”
সামন্ত লাল সেন বলেন, “এই সময়রে মধ্যে নির্মাণ কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে। আর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কাজ শেষ করবে। তারপর ২২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
“আমাদের নিজস্ব জনবল তৈরি করতে হবে এটা পরিচালনার জন্য। আশা করছি, দেড় বছর পর একটা ভালো জিনিস দেখতে পাব। আশা করি আমার জীবদ্দশায় এটা দেখে যেতে পারব।”
চট্টগ্রামে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সামন্ত লাল বলেন, “কিছুদিন আগে একজন ডাক্তার মইন উদ্দিন মাহমুদ বাঁশখালীতে দগ্ধ হন। তখন আমরা জানপ্রাণ চেষ্টা করি তাকে কীভাবে ঢাকায় নেব। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এখন তিনি অনেকটা ভালো আছেন।
“শুধু তিনি একজন চিকিৎসক বলে নয়, বার্নের অনেক রোগী এই অঞ্চলে। যারা ঢাকা যেতে না পারার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাদের জন্য এটা খুব প্রয়োজন।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, “এটা চীনা অর্থায়নে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র তারা দেবে। জনবল আমাদের। আশা করি ডিপিপি শীঘ্রই অ্যাপ্রুভ হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সব ডিজাইন ও প্রাইসিং তারা শেষ করবেন।
“ডিপিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা হয়ে এখন একনেকে যাবে। আমাদের দিক থেকে সব কাজ দ্রুত শেষ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।”
এই প্রকল্পে চীন ১১৮ মিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক শামীম আহসান।
“আজ আলোচনায় আমরা এই প্রকল্পের পাশাপাশি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে তারা আরও কীভাবে কন্ট্রিবিউট করব সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি দেখে উনারা খুব বেশি। চট্টগ্রামবাসীর চাহিদার কারণে আমরা সব করছি।”
সাত তলা বিশেষায়িত বার্ন হাসপতালটি হবে দেড়শ শয্যার। হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ, তিনটি অপারেশন থিয়েটার ও ২৫টি এইচডিইউসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক সুবিধা থাকবে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।
চীনা প্রতিনিধি দলের পক্ষে কো-অর্ডিনেটর লিও বো বলেন, “অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ। দ্রুত ঠিকাদার নির্ধারণ করা হবে। সামন্ত লাল সেনকেও ধন্যবাদ। তিনি সব আয়োজন করেছেন। জমি নির্ধারণে সহযোগিতা করেছেন হাসপাতালের পরিচালক।”
প্রতিনিধি দলে ছিলেন চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাউ জিন পিং, লি ফ্রাং জি ও ডন ইয়োগ জান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকলেও সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। শয্যা সংখ্যা মাত্র ২৬টি। রোগীর তুলনায় এটি অপ্রতুল। এছাড়া আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধা নেই।
আগুনে বা বিস্ফোরণে পোড়া রোগীর বার্নের পরিমাণ বেশি হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। গত কয়েক বছরে শিল্প কারখানায় বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সব দগ্ধ রোগীকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়েছে। পোড়া রোগীর জন্য আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ঢাকায় পাঠাতেও দেরি হয়। এ কারণে অনেক সময় রোগী মারা যায়।
অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত অস্ত্রোপচার কক্ষসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও করবে চীন সরকার।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের জমি থেকে তিনশ অবৈধ ঘর উচ্ছেদ
চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি সোমবার