পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ বলেছে, ভারত মহাসাগরে এক অভিযানে তারা ওই জলদস্যুদের আটক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে।
Published : 14 Apr 2024, 09:05 PM
সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ডের পুলিশ আট জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনায় জড়িত ছিল।
পান্টল্যান্ড পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে সোমালিয়ার ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গেরো রোববার এ খবর দিয়েছে।
এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজে শেষ পর্যন্ত ৬৫ জন জলদস্যু ছিল। বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৩টার দিকে তারা নয়টি স্পিডবোটে করে জাহাজ ছেড়ে যায়।
এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হবার কিছু সময় পর এই জলদস্যুদের গ্রেপ্তারের খবর এলেও তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া অর্থ উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পান্টল্যান্ড পুলিশের এক কর্মকর্তা গেরোকে বলেন, “মুক্তিপণ দেওয়ার প্রবণতা জলদস্যুদের আরো বেশি জাহাজে হামলা করতে উৎসাহিত করতে পারে।”
পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স রোববার বিকেলে তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় জানায়, তারা ভারত মহাসাগরের পান্টল্যান্ড উপকূলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এরকম এক অভিযানে তারা জলদস্যুদের আটক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে।
ওই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া চারটি ছবির একটিতে আট জলদস্যুকে দেখা যাচ্ছে, যাদের পাহারা দিচ্ছিলেন তিন পুলিশ সদস্য।
সোমালি জলদস্যুদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণের বিনিময়ে এমভি আবদুল্লাহ এবং এর নাবিকদের মুক্তি দেওয়া হয়। সোমালিয়ার স্থানীয় কিছু সংবাদ মাধ্যমও একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে।
PMPF Forces, specifically the naval units operating on the coasts of Puntland State, strongly accelerated their security operations on the coasts of Puntland on the Indian Ocean, where they captured pirates and materials. pic.twitter.com/VP1VI5rVo5
— Puntland Maritime Police Force (@PMPFOfficial) April 14, 2024
গেরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, জলদস্যুতা ঠেকাতে পান্টল্যান্ড মেরিন পুলিশ তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে মিলে সোমালিয়া উপকূলে নজরদারি বাড়িয়েছে।
হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের সাগরে দস্যুতা প্রতিরোধে নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের আটলান্টা মিশন শেষ পর্যন্ত এমভি আবদুল্লাহর উপর নজর রেখেছিল।
জাহাজটি মুক্তি পাওয়ার পরও আশপাশে আটলান্টা মিশনের একটি জাহাজকে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের মুক্তির আগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দিনের বেলার ওই ভিডিওতে এমভি আবদুল্লাহর পরিস্থিতি দেখা যায়।
সেখানে দেখা যায়, আবদুল্লাহর নাবিকরা সবাই জাহাজের ডেকে লাইন ধরে দাঁড়ানো। ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সামনে চক্কর দিচ্ছে।
ওই সময় জলদস্যুরা দুটি স্পিড বোট নিয়ে জাহাজের সামনে অবস্থান নেয়। জাহাজে থাকা একজন বাংলায় নাবিকদের বলেন হাত তুলতে। এরপর সোমালি ভাষায় জলদস্যুদের কিছু বলতে শোনা যায়।
উড়োজাহাজটি একবার চক্কর দিয়ে একটি করে ব্যাগ পানিতে ফেলছিল, আর স্পিড বোটে থাকা জলদস্যুরা সেই ব্যাগ তুলে নিচ্ছিল। এভাবে তিনবার তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। প্রতিবার জলদস্যুদের উল্লাস করতে শোনা যায়।
তৃতীয় ব্যাগ ফেলার পর উড়োজাহাজটি ঘুরে গন্তব্যের দিকে চলে যায়। এরপর এমভি আবদুল্লাহতে থাকা কেউ একজন ইংরেজিতে নাবিকদের বলেন, ‘তোমরা এবার মুক্ত’।
মুক্তির পর এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি। জিম্মি ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের।
মুক্তিপণ নিয়ে দেন দরবারের পর অবশেষে জাহাজটি দস্যুমুক্ত হয়েছে এক মাস পর।