“চিকিৎসকরা তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রাখলেও সরকারি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন,” বলেন ডা. ফয়সাল।
Published : 23 Apr 2024, 05:46 PM
দুই চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগ নির্ণয় সেবা বন্ধ রয়েছে। তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টা সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার তরফে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা করাতে যাওয়া রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বারেও সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৭ এপ্রিল বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতিসহ অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
গত ১৪ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ‘মেডিকেল সেন্টারে’ এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে চিকিৎসককে এবং ১০ এপ্রিল রাতে পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে।
দোষীদের বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলার সব প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ২০ এপ্রিল দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পটিয়া ও চট্টগ্রাম নগরীতে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
“মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু পরদিন তাদের জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। পটিয়ার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এখনও।”
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা ফয়সাল ইকবাল বলেন, চিকিৎসকরা তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রাখলেও সরকারি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আরাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল থেকে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু যারা আগে থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি কোনো চিকিৎসক মঙ্গলবার ব্যক্তিগত চেম্বারও করবেন না বলে জানান তিনি।
ইয়াসিন বলেন, আগে থেকে এ ঘোষণা থাকায় কোনো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেননি। বিকালেও কোনো চিকিৎসক চেম্বারে বসবেন না।
এদিকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন জানান, হাসপাতালগুলোতে যেসব রোগী আছে, হাসপাতালের নিজস্ব চিকিৎসকরাই শুধু চিকিৎসা দিচ্ছেন। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হাসপাতালে আনা যাচ্ছে না।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতেও সকাল থেকে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে না।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে আসা বিকাশ কান্তি নাথ নামে এক ব্যক্তি বলেন, “ডাক্তারের দেওয়া কিছু পরীক্ষা করাতে শহরে এসেছিলাম। চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে এপিক ও পপুলারে গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, ‘আজকে কোনো পরীক্ষা করানো হবে না’। আগামীকালকে আসতে বলছেন।
“মনে করেছি, হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানো হবে না। এসে দেখছি- কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হচ্ছে না।”
চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখানোর জন্য সচরাচর সকালে কিংবা আগের দিন সিরিয়াল দিতে হয়। তাদের অনেকের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার অনেক চিকিৎসক মঙ্গলবার চেম্বার করবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। স্বাভাবিক ভাবে একটা চাপ পড়ছে আউটডোর এবং ল্যাবে।”
চমেক হাসপাতাল ল্যাবে পরীক্ষার চাপ বেশি পড়েছে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রামে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির
চট্টগ্রামে চিকিৎসক পেটানোর মামলায় গ্রেপ্তার ৬
হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু, চিকিৎসককে পিটিয়ে আইসিইউতে পাঠাল স্বজনরা