পটিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে দুই চিকিৎসককে মারধরে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের মালিকরা।
Published : 17 Apr 2024, 10:12 PM
চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি।
বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের মালিকদের এই সমিতি এ হুঁশিয়ারি দেয়।
‘পটিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ওপর রোগীর স্বজন ও দুর্বৃত্ত কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সমিতির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, "১০ এপ্রিল পটিয়া হাসপাতালে এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগে ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
"আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অদৃশ্য কারণে নীরব। আর ১৪ এপ্রিল মেডিকেল সেন্টারে নিউমোনিয়া আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার স্বজনেরা ডা. রিয়াজ উদ্দিনকে মারধর করে। ওই চিকিৎসক এখন আইসিইউতে। ওই ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে তারা জামিনে।"
ডা. শরীফ বলেন, "পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে হামলা চলছে। চিকিৎসকরা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে ভালো চিকিৎসাসেবা আশা করা যায় না। এর ফলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ভেঙে পড়বে চিকিৎসাব্যবস্থা।"
পটিয়ায় চিকিৎসকের ওপর হামলাকারীদের ‘রহস্যজনক কারণে’ পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না অভিযোগ করে ডা. শরীফ বলেন, “ঘটনার পর থেকে আসামিরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এমনকি আসামিরা যেখানে আছে সেখানে পুলিশের উপস্থিতিও রয়েছে।
"অথচ ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করছে না। হামলাকারীদের স্থানীয় প্রভাবশালী প্রশ্রয় দিচ্ছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এমন হামলাগুলোর ঘটনায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে সর্বাত্মক কর্মবিরতির মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।"
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শরীফ বলেন, "মেডিকেল সেন্টারে আমরা শুরুতেই খোঁজ নিয়েছি, চিকিৎসকদের দিক থেকে কোন গাফিলতি ছিল কিনা। তেমন কিছু পাইনি। তারপরও কারো অবহেলা থাকলে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখব।"
অন্যদের মধ্যে সমিতির সহ-সভাপতি ডা. এটিএম রেজাউল করিম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম, সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. অহিদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান, ডা. মঈনুল ইসলাম মাহমুদ, ডা. আবুল কাশেম মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
গত রোববার সকালে নগরীর ওআর নিজাম রোডে মেডিকেল সেন্টার নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। সেখানে এনআইসিইউর কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন ডা. রিয়াজ উদ্দিন।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আরাফাত জানান, শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এক বছর বয়সী একটি শিশুকে হাসাতালে ভর্তি করা হয়, সে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। রাতে পিআইসিইউতে রাখার পর সকালে ওই শিশুকে এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে রোববার সকাল ৯টা ৫০মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
এরপর বেলা ১১টার দিকে শিশুটির বাবা লোকজন জড়ো করে এনে এনআইসিইউর সামনে চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে আহত অবস্থায় ডা. রিয়াজ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে আইসিইউ ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা সুমনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৮-২০ জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত সুমনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১০ এপ্রিল রাতে পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। তিনিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।