জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামে এবার ‘ভুগতে হবে কম’, আশা প্রকল্প কর্মকর্তাদের

পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে খাল পরিষ্কার রাখতে জনসাধারণের সচেতনতা চেয়েছেন জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিডিএ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2023, 03:57 PM
Updated : 2 May 2023, 03:57 PM

জলাবদ্ধতায় নাকাল চট্টগ্রামকে রক্ষার প্রকল্পের ৭৬ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে জানিয়ে এটির পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের আশা, এ বছর বর্ষায় অন্যবারের তুলনায় কম ভুগতে হবে নগরবাসীকে।

মঙ্গলবার নগরীর দামপাড়ায় প্রকল্পটির পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনক্ট্রাকশন বিগ্রেডের কার্যালয়ে সংবাদ মাধ্যম্যের সামনে প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি তুলে ধরার সময় এমন আশা প্রকাশ করা হয়।

পাশাপাশি পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে খাল পরিষ্কার রাখতে জনসাধারণের সচেতনতা চেয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিডিএ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

এসময় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর ৩৬টি খালের মধ্যে ১৫টির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত ২০টি খালের কাজ শেষ হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী জলাবদ্ধতার কারণ তুলে ধরে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে খালের অবৈধ দখল, খালকে সাধারণ লোকজন ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খালের সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পিত সংযোগ না থাকা, নিয়মিত ড্রেন ও খাল পরিষ্কার না করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প বর্জ্যের অপরিকল্পিত নিষ্কাষণ, জোয়ার ভাটার প্রভাব ও উঁচু নিচু ভূমির কারণে জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে।

এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আলোচিত এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন বলেন, “এ প্রকল্পের সুফল পেতে জনসাধারণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। শুরুর দিকে এ কাজে সমন্বয়ের অভাব ছিল। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সবার সাথে সমন্বয় সভা করে কাজ করেছি।”

এ প্রকল্পের কাজের সময় বিভিন্ন খালে তৈরি করা বাঁধের কারণে আগে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা হয়েছে বলে নানা অভিযোগ ছিল।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, “এবার বাঁধ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে রাস্তার ড্রেন পরিষ্কার করা না হলে, খালে পানি আসবে না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

একটু বৃষ্টিতেই প্রায় প্রতিবছর পানিতে তলিয়া যাওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৭ সালে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, যেটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে এবছরের জুন পর্যন্ত করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৫টি ব্রিজ, ৬টি কালভার্ট, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ, পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটর নতুন ড্রেন, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার খালের পাশে সড়ক নির্মাণ ও ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মোট ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, এসব কাজের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৪৫টি ব্রিজ, ছয়টি কালভার্ট, ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেন, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, পাঁচটি রেগুলেটর, ১৩টি সিল্ট ট্রিপ, ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পাড়ের রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন খালে ডাস্টবিনের মতো করে আবর্জনা ফেলার কারণে সেগুলো বিভিন্ন কালভার্টের নিচে থাকা ইউটিলিটি লাইনের সাথে আটকে গিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

“তবে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় যেসব ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর নিচে কোন ধরনের ইউটিলিট লাইন না থাকায় যার কারণে পানি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।”

চট্টগ্রাম নগরীর ১৮ শতাংশ এলাকা জোয়ার ভাটার পানির সঙ্গে প্লাবিত হত উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী জানান, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় যে পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর কারণে এবার তা হচ্ছে না।

বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী

এবারের বর্ষায় চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা বেশি হওয়ার যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেটি উড়িয়ে দেন জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ও প্রকল্পের পূর্তকাজ পরিচালনাকারী সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা।

প্রকল্প পরিচালক শাহ আলী বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীর এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে আমরা ৩০২ কিলোমিটার কাজ করেছি। বাকিগুলো পরিষ্কার না করার কারণে যদি জলাবদ্ধতা হয়, তাহলে সে দায়িত্ব আমরা নেব না।”

৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিগ্রেডের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনালের মাসুদুর রহমান বলেন, “আমাদের বিগ্রেডের পক্ষ থেকে যতগুলো প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি তারমধ্যে সবচেয়ে জটিল প্রকল্প চট্টগ্রামের এ জলাবদ্ধতা প্রকল্প।

“এ প্রকল্পে ১২ মাস কাজ করা যায় না। কারণ কাজ করতে গেলে খালে বাঁধ তৈরি করতে হয়। যার কারণে বর্ষায় বৃষ্টি হলে অন্যান্য স্থানে পানি উঠে গিয়ে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।”

খালের পার দখল হয়ে যাওয়াকে ‘দ্বিতীয় প্রতিবন্ধতা’ উল্লেখ করে বিগ্রেডিয়ার জেনালেল মাসুদুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন স্থানে কবরস্থান, মসজিদ, শ্মসান তৈরি করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে এগুলো অপসারণ করতে গেলে নানা রকমের বাধা আসে।”

কাজের চেয়ে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংযোগ লাইনগুলো সরানোর অনুমোদনের ব্যাপারটিও ভোগান্তির উল্লেখ করে তিনি জানান, একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইউটিলিটি অপসারণের অনুমতি নিতে তাদের ছয় মাস সময় লেগেছিল, যেটার কাজ করতে সময় লেগেছে মাত্র দেড় মাস।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাসুদুর বলেন, “খাল পরিষ্কার রাখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দরকার। অনেক জায়গায় দেখা যায় রাস্তা ডুবে গেছে, কিন্তু খালে পানি নেই। রাস্তার পানিগুলো খালে যেতে পারছে না। এজন্য দরকার ড্রেন পরিষ্কার রাখা।”