“আদালত বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে নুরুল কবীর ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন। এই অপরাধের সাজা যাবজ্জীবন।”
Published : 03 Apr 2024, 09:38 PM
মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ে করে এক সপ্তাহ স্বামী-স্ত্রীর মত থেকে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বুধবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা দশ বছর আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিতরা হলেন- চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার কাটাছড়া ইউনিয়নের মধ্যম বাড়িয়া খালী গ্রামের নুরুল কবীর, মো. শহীদ, শরীফ ও বাপ্পী।
তাদের মধ্যে নুরুল কবীর ১৯ বছর বয়সী ওই নারীকে বিয়ে করেন। বাকিরা নুরুল কবীরের আত্মীয় ও অভিভাবক সেজে বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামি নুরুল কবীর পরিচয় গোপন করে ভুয়া এনআইডি দেখিয়ে ওই বিয়ে করেছিলেন।
“ওই নারী জানতেন তিনি বৈধ বিয়ে করেছেন। কিন্তু নুরুল কবীর যেহেতু নিজ পরিচয়ে বিয়ে করেনি, তাই সে জানত ওই নারী তার স্ত্রী নয়।
“তাই আদালত বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে নুরুল কবীর ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন। এই অপরাধের সাজা যাবজ্জীবন। একইভাবে নুরুল কবীরের সহযোগীদের অপরাধও এত ব্যাপক যে, তারা সহযোগিতা না করলে সে মিথ্যা পরিচয়ে বিয়ে করতে পারত না। তাই তার তিন সহযোগীকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
কারাদণ্ডের পাশাপাশি চার আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
রায় ঘোষণার সময় আসামি শহীদ ও শরীফ আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আর নুরুল কবীর ঘটনার পর গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে গিয়ে পালিয়ে যান। অপর আসামি বাপ্পীও পলাতক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নুরুল কবীর অন্য আসামিদের নিজের আত্মীয় ও অভিভাবক সাজিয়ে ওই নারীকে বিয়ের পাত্রী হিসেবে দেখে যান।
এরপর ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি রাতে বিয়ের জন্য কথাবার্তা বলতে ওই নারীর বাড়িতে যান নুরুল কবীর ও তার তিন সঙ্গী। সেদিনই বিয়ে করতে চাইলে কাজী ডেকে আনা হয়। কাজী নুরুল কবীরের জন্ম নিবন্ধন দেখতে চাইলে তারা ভুয়া নাম ঠিকানা সম্বলিত একটি জন্ম নিবন্ধনপত্র কাজীকে দেন।
ছয় লাখ টাকা কাবিনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই নারীর বাসায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়।
বিয়ের সময় নুরুল কবীরের দেওয়া জন্ম নিবন্ধনে তার নাম ছিল মো. রাসেল। চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার গড়িয়াইশ গ্রামের মো. শাহজাহান তার পিতা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, “তখন বলেছিল, তার পিতা-মাতাকে নিয়ে এসে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবে। বিয়ের পর সে আমার বাবার বাড়িতেই আমার সাথে স্বামী-স্ত্রীর মত ছিল।
“এক সপ্তাহ পর আমাকে তার বাড়িতে নেওয়ার কোন কথা না বলে আমাকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যেতে চাপ দেয়।”
নুরুল কবীরের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় বিয়ের সময় দেওয়া জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা লোক পাঠিয়ে তার বাড়ির খোঁজ মেলেনি বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি বিকেলে নুরুল কবীর ওই নারীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে। তখন নুরুল কবীর তার আসল নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল কবীর সেদিন বলেন, এর আগেও মিথ্যা পরিচয়ে পাঁচটি বিয়ে করেছিলেন তিনি। এরপর ওই নারী জোরারগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ অনুসারে মামলা করেন।
ওই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিলে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। মোট আট জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার আদালত চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।