মেয়রের অভিযোগ, সিডিএর কাজে সমন্বয় নেই; সিডিএ চেয়ারম্যান বলছেন, সমস্যা ড্রেনেজে, যার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের উপর।
Published : 09 Aug 2023, 08:16 PM
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ যখন চলছে, তখনই আবার কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ডুবেছে নগরী। আর এজন্য পরস্পরকে দোষ দিচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে টানা বর্ষণে প্রায় চার দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ছিল জলাবদ্ধ। কিছু এলাকায় বাড়িগুলোর নিচতলাও ডুবে যায়। দোকান ও বিপনি কেন্দ্রে ঢোকে পানি।
দুর্ভোগময় এই পরিস্থিতিতে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পসহ দুটি প্রকল্প, সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্প ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটিসহ মোট চারটি প্রকল্প চলমান থাকার পরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন।
এর জবাব দিতে বুধবার সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সব দায় তার সংস্থার উপর চাপানোর চেষ্টা করা ‘ঠিক হচ্ছে না’।
তার ভাষ্যে, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজের ৭০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। এর সুফলও মিলছে। চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল, মির্জা খালসহ প্রধান খালগুলোতে পানি নেই।
ড্রেনেজ সমস্যার কারণে সড়ক থেকে পানি নামছে না দাবি করে সেই দায় সিটি করপোরেশনের উপর দেন দোভাষ।
তিনি বলেন, “সড়কের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমি কাউকে দায়ী করছি না। তবে কোনো সংস্থা যদি জলাবদ্ধতার জন্য শুধু সিডিএকেই দায়ী করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি ক্লিয়ার করছি।”
জলাবদ্ধতায় সড়কে গাড়ি রেখে রিকশা নিয়ে বাসায় মেয়র
জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ভোগা মেয়র রেজাউল চার দিন আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার প্রকল্প সিটি করপোরেশনের না। তবুও মানুষ আমাদেরকে গালাগাল দিচ্ছে।”
সিডিএ ‘নিজেদের মতো কাজ করছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, “ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে আমি তাদের কাজ করতে বলেছিলাম। কিন্তু কাউকে কোনোদিনও ডাকা হয়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ চেয়ারম্যান দোভাষ বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) না পারায় সিডিএকে এ প্রকল্পের কাজ দিয়েছে সরকার। সিডিএর সক্ষমতা না থাকলে কি সিডিএকে কাজ দিত? উনাদের (সিসিসি) যোগ্যতা থাকার পরও কাজ আদায় করতে পারছেন না কেন?
“এখন সকল দায় সিডিএর উপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঠিক নয়। খালগুলোতে পানি নেই অথচ সড়কে পানি জমে থাকছে। নালা-নর্দমা পরিষ্কার করে সড়ক থেকে পানি খালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সিডিএ’র নয়।”
সিডিএর মেগা প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ঘনমিটারের মত মাটি অপসারণ করা হয়েছে। এ বর্ষাকে সামনে রেখে খালগুলোতে টেম্পরারি স্লুইস গেইট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও রাজাখালি এলাকায় আগের মতো পানি ওঠেনি। আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল এবার ডোবেনি।”
প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অর্থ ছাড় না হওয়াকেও কারণ দেখান সিডিএ চেয়ারম্যান।
মেগা প্রকল্পের পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান, নগরীতে রয়েছে ৫৭টি খাল। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৬টি খাল।
“এখন প্রশ্ন ৫৭ খালের পানি ৩৬টি খাল দিয়ে নিষ্কাশন কীভাবে সম্ভব? বাকি ২১টি খালের কাজও করতে হবে।”
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: প্রকল্প ঘিরেই ভোগান্তি শেষের আশা
বন্দর নগরীর ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ৩০২ কিলোমিটার রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটা আমরা করেছি। রিটেইনিং ওয়াল ও খননসহ ১৬টি খালের কাজ পুরোপুরি শেষ। ১০টি খালের খনন ও বেশিরভাগ কাজ শেষ। খালি মুখের দিকে একটু কাজ বাকি আছে।
“বাকি আছে ১১টি খালের কাজ । এরমধ্যে জলাবদ্ধতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় চাক্তাই, রাজাখালি, মির্জাখাল ও হিজড়া খালকে। এই খালগুলোর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছি। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি।”
ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক শাহ আলী।
তিনি বলেন, “অনেক বাড়ি রয়েছে একেবারে খালের পাশে। এমনও জায়গাও আছে যেখানে কোনো বাড়িতে ঢুকে জানালা দিয়ে খাল দেখতে হয়। সেখানে কাজ করতে গেলে ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব মানবিক দিকটি বিবেচনা করছি। যেখানে বাড়ি রয়েছে সেখানে খনন কাজের আগে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করতে হচ্ছে।
“চাক্তাই খাল নগরীর একটি অংশের পুরো পানি নিতে পারে না বলেই বারইপাড়া খাল খননের প্রকল্প নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ খালের কাজও শেষ করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস ও বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ-সিসিসির সমন্বয় চায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ
প্লাস্টিক পলিথিন ককশিট বাড়াচ্ছে জলাবদ্ধতা: রেজাউল
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা বাড়িয়ে তোলার জন্য প্লাস্টিক, পলিথিন ও ককশিটকে দায়ী করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার চাক্তাই খালের চামড়া গুদাম সেতুর নিচে বাঁধে জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, জনগণ সচেতন হওয়ায় নগরীতে আবাসিক এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সুশৃঙ্খলভাবে চলছে।
মেয়র একইসঙ্গে বলেন, “তবে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক-পলিথিনের প্যাকেজিং ব্যবহার করছে এবং সেসব প্যাকেজিং যথাযথভাবে চসিকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
“যেমন অনেক দোকান ওয়ান টাইম কাপ ও পলিথিনের প্যাকেজিংয়ের পণ্য বিক্রি করছে। সে পণ্য ব্যবহারের পর দোকানে বিন না থাকায় প্যাকেজিংটি দোকানদার ও সাধারণ মানুষ সরাসরি রাস্তা বা নালায় ফেলছে। এসমস্ত প্যাকেজিং প্রোডাক্ট অপচনশীল হওয়ায় তা নালায় জমে জলাবদ্ধতার তীব্রতা বাড়াচ্ছে।”
যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আবর্জনা সরাসরি নালায় পড়বে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান মেয়র।