নবরূপে উন্মুক্ত লালদিঘী মাঠ

মাঠ ফিরে পেয়ে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। দুপুরেই তারা ফুটবল আর ব্যাট-বল-স্ট্যাম্প নিয়ে নেমে পরে খেলতে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2023, 02:27 PM
Updated : 2 Jan 2023, 02:27 PM

নতুন সাজে ছয় দফা মঞ্চ, ওয়াকওয়ে, দেয়ালে ম্যুরাল, শিশুদের জন্য রাইড আর ঘাসে ঢাকা মাঠ- নতুন এক রূপে উন্মুক্ত হল চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠ।

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সংস্কার কাজের পর সোমবার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এ মাঠটি ‍উন্মুক্ত করে মাঠের মালিক সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এখন থেকে স্কুলের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য মাঠটি সকাল-বিকাল উন্মুক্ত থাকবে। থাকছে হাঁটার সুযোগও। সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনের জন্য মঞ্চের সাথে গ্রিন রুমও করা হয়েছে।

এছাড়া জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা এ মাঠে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টি দেখবে।

ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলাও ফিরবে লালদিঘী মাঠে। তবে মাঠের ভেতর মেলা আয়োজনের অনুমতি মিলবে না। মাঠের নিরাপত্তায় আনসার নিয়োগ করা হবে। রাতে আলোর ব্যবস্থাও থাকছে ম্যুরাল ঘিরে।

মাঠ ফিরে পেয়ে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। দুপুরেই তারা ফুটবল আর ব্যাট-বল-স্ট্যাম্প নিয়ে মাঠে নেমে পরে খেলতে। শিক্ষা উপমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ধন্যবাদ জানায় মাঠে খেলার ব্যবস্থা হওয়ায়।

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাদমান বলে, “আমরা মাঠে খেলতে পারিনি এতদিন। আজকে থেকে মাঠে নিয়মিত খেলব।” 

ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক ছাত্র ইফতেখার মিহির বলে, “সবাই মিলে এখানে খেলা যায়। আমরা প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে খেলতে আসব।”

শিক্ষার্থীরা মাঠ খোলা পেয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছিল নতুন স্থাপিত ম্যুরাল আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আঁকা দেয়ালচিত্র। মাঠের পাশে দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডেও চড়ছিল তারা।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, “এ মাঠটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জড়িত। আমদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ঘোষণা দেন। জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মাঠে অনেক সভা করেছেন। 

“সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস এই মাঠকে ঘিরে। এটা মুসলিম হাই স্কুলের খেলার মাঠও। কিন্তু মাঠটা ঐতিহ্য হারাতে বসেছিল। এখানে দোকানপাট বসত, গাড়ি পার্ক করা হত, এমনকি অসামাজিক কাজও হত। জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আমরা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলবে। স্কুল সময়ের পর স্থানীয়রা খেলবে। বয়স্করা সকাল-বিকাল হাঁটবে। অন্য সময় সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আগে যেভাবে স্কুলের অনুমতি নিয়ে আয়োজন করেছে, সেভাবে করবে।

“কোভিডের কারণে সভা-সমাবেশের অনুমতি না থাকায় মাঠের কাজ শেষ হলেও উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।”

নওফেল বলেন, “সিটি করপোরেশনের মাঠের দেখাশোনা করবে।… নগরবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি দেখবেন। আমাদের সবারই দায়িত্ব আছে। মাঠে যেন নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেজন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আহ্বান জানাই।”

জব্বারের বলী খেলার আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, “বলী খেলা অবশ্যই হবে। বলী খেলা তো ক্রীড়ারই অংশ। খেলা হবে। তবে মেলা হবে না। মাঠে কোনো মেলা করতে দেব না। গাড়ি পার্ক করতে দেব না।

“মাঠে কোনো খুঁটি গাড়া যাবে না। কোনো অনুষ্ঠানের জন্য কেউ খুঁটি গাড়লে তারাই তা ঠিক করে দেবে। ক্ষতিপূরণ দেবে।”

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ লালদিঘী মাঠে জড়িয়ে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফার ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভুত্থানের সেই ইতিহাস।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘ছয় দফা মঞ্চ’ নির্মাণসহ মাঠের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার টেরাকোটা।

চারপাশে সীমানা দেয়াল ঘেরা মাঠে থাকছে কিডস কর্নার, বসার বেঞ্চ আর ওয়াকওয়ে। সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে পুরো মাঠ।

মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজের মোট ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

Also Read: নবরূপে ফিরছে সেই লালদিঘী ময়দান