সিডিএর প্রকল্প: আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় থাকবে, আশা কর্মকর্তাদের

এই এলাকাগুলোর সংশ্লিষ্ট খালগুলোকে যদি আমরা ফুল ফ্লোয়িং অবস্থায় আনতে পারি এবং খালগুলোর সাথে সম্পৃক্ত প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি নালাগুলো যদি পরিষ্কার করতে পারি তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কিছুটা সুফল পেতে পারি।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2024, 02:12 PM
Updated : 12 March 2024, 02:12 PM

আগামী বর্ষায় বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালীন প্রাক প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও বর্ষাকালীন পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরা হয়।

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৮৬২৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে।

সমন্বয় সভায় প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। প্রকল্পের ভৌত কাজে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ।”

তিনি বলেন, “বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান বিবেচনায় আমরা ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, শমসের পাড়া, বাদুরতলা, ফুলতলা, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, আগ্রাবাদ ও হালিশহর এই এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা বেশি দেখতে পেয়েছি।

“সেই প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। এই এলাকাগুলোর সংশ্লিষ্ট খালগুলোকে যদি আমরা ফুল ফ্লোয়িং অবস্থায় আনতে পারি এবং খালগুলোর সাথে সম্পৃক্ত প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি নালাগুলো যদি পরিষ্কার করতে পারি তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কিছুটা সুফল পেতে পারি।”

প্রকল্পের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, “এ নিয়ে তিনমাস সিটি করপোরেশনের সাথে বসেছি। তারা সহযোগিতা করেছে। তাদের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রকল্পের অধীনে ছয়টি রেগুলেটর আছে। এরমধ্যে ৫টি রেগুলেটরের কাজ শেষ করেছি। এই ৫টা রেগুলেটরই আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে আশা করি পুরোপুরি ফাংশনাল হয়ে যাবে।

“প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে আজ বৈঠক করে বর্ষাকালের পরিকল্পনা করেছি। মির্জা, চশমা, চাক্তাই, চাক্তাই ডাইভারশন, বাকলিয়া এই কয়টা খাল যদি প্রতিবন্ধকতা ‍মুক্ত করতে পারি এবং সংলগ্ন নালাগুলো পরিষ্কার রাখতে পারি তাহলে এবার পরিস্থিতি ভালো থাকবে।”

খালগুলোতে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে ৩৬টি খালের মধ্যে ২০টিতে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে খালের মধ্যে বালুর ফাঁদ বা সিলট্র্যাপের নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।”

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা ২১টি খাল নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দীন বলেন, “এই মুহূর্তে এসব খাল নিয়ে কাজ করার সুযোগ সিডিএর নেই। তবে এই খালগুলো নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।”

বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিডিএর ৩৬টি খাল ঘিরে নেয়া প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৫৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়নের করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

মঙ্গলবারের সমন্বয় সভায় এই প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সুজাউদ্দিন পাঠান বলেন, “প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় সীমাবদ্ধতা অর্থ বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যদি ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে নদীর পাশে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল এবং রেগুলেটর নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।

“জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর আওতায় নগরের খালগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব খালে যাতে কেউ পুনরায় অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রাম নগরীর ৩৬টি খাল নিয়ে সিডিএর প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খাল পাড়ের তিন হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

প্রতি বছর বর্ষার আগে নগরীর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখার আশ্বাস দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। তবে আশ্বাস দিলেও বর্ষা এলে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্রের।

প্রতি বছরই বর্ষায় কয়েক দফা নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার হয়।