চসিক: শোরগোলের মধ্যেই অবৈধভাবে আরও ৩৪১ জন্ম নিবন্ধন

পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পরও অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকাররা নিয়ে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2023, 05:36 PM
Updated : 23 Jan 2023, 05:36 PM

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হ্যাকারদের করা ২০৬টি জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে পুলিশের অনুসন্ধানের মধ্যেই অবৈধভাবে আরও ৩৪১টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছে।

রোববার ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের অ্যাকাউন্ট ফের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুষ্কৃতকারীরা একদিনেই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার পরও হ্যাকাররা আমাদের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। গতকাল (রোববার) আমাদের ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে ৩৪১টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা চিহ্নিত হয়েছে।

“আমরা আপাতত জন্ম নিবন্ধন বন্ধ রেখেছি। আজকে সিটি করপোরেশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- আমরা এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা করব।”

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত নগর সংস্থার পাঁচটি ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ২০৬টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ৬৮টি ঘটেছিল এই ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। হ্যাকারদের কবলে পড়া বাকি চার ওয়ার্ড হচ্ছে- ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৩ নম্বর পাহাড়তলী ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা।

এসব ঘটনায় জিডি হলে অনুসন্ধান শুরু করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

অনুসন্ধানে নেমে প্রাথমিকভাবে এ কাজ ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্রের’ বলে ধারণা করার কথা রোববার জানিয়েছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন। এরইমধ্যেই সেদিনই অবৈধভাবে আরও ৩৪১টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা আসিফ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।”

Also Read: চসিক: সার্ভারে ‘অনুপ্রবেশ করে’ ২০৬টি জন্মনিবন্ধন করল কে?

Also Read: কার্যক্রম বন্ধ, তার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন হল কীভাবে?

এদিকে অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় সোমবার নগর ভবনে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সভা করেছেন, যাতে নগর সংস্থার তরফে মামলা করার সিদ্ধান্ত এসেছে।

সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, “বর্তমানে সরকারি সেবাসমূহকে ডিজিটালাইজ করায় মানুষ এখন সহজে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই সিটি কর্পোরেশনের সেবা নিতে পারছে। তবে সারা বিশ্ব জুড়েই সক্রিয় হ্যাকাররা এ ধরনের সেবাগুলোকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

“সম্প্রতি হ্যাকাররা আমাদের বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার জেনারেলের (জন্ম নিবন্ধন) কার্যালয়ের সার্ভার হ্যাক করে চট্টগ্রামে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করার চেষ্টা করছে বলে জানতে পেরেছি। এ ধরনের সাইবার হুমকি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাইবার নিরাপত্তার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

জন্ম নিবন্ধনসহ সব ধরনের অনলাইন সেবাদানকারী কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, “ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরকেও এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

জানতে চাইলে নগর সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়ার্ড পর্যায়ে আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাক করে, নাকি ঢাকার কেন্দ্রীয় সার্ভার হ্যাক করে এসব জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে, তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।

“এ বিষয়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মহোদয়কে অবহিত করে উনার নির্দেশনা চাইব। উনি যেভাবে নির্দেশনা দিবেন সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রয়োজনে এ ব্যাপারে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশক্রমে কাউন্সিলরদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করা হবে।”

নগর সংস্থার আইটি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি জানার পর থেকে আমাদের দিক থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়- সেগুলো আমরা নিয়েছি। ইতিমধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে।

“যেসব জন্ম নিবন্ধন হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করে আমরা জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। কারা আইডি হ্যাক করেছে- সে বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কাজ করছে।”

এর আগে ২০২১ সালে জন্ম নিবন্ধন ও সনদ ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে সাতটি ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে চারটিসহ মোট ১৮টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছিল।

সেই ঘটনার মামলাটিও তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, জড়িত অভিযোগে গত নভেম্বরে যশোর থেকে আশরাফুল আলম নামে এক কম্পিউটার দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।