চসিক: সার্ভারে ‘অনুপ্রবেশ করে’ ২০৬টি জন্ম নিবন্ধন করল কে?

ঘটনা অনুসন্ধান করছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2023, 05:23 PM
Updated : 22 Jan 2023, 05:23 PM

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে ‘অনুপ্রবেশ করে’ দুই শতাধিক জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছে।

চলতি বছরের ৮ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধভাবে করা ২০৬টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ধরা পড়ার পর সাধারণ ডায়েরি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরপর অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

অনুসন্ধানে নেমে প্রাথমিকভাবে এ কাজ ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্রের’ যারা ‘সার্ভার আইডি হ্যাক করে’ করেছে বলে ধারণা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিনের।

চমকে দেওয়া এ জালিয়াতির ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ৮ জানুয়ারি তার ওয়ার্ডে ৪০টি অবৈধ জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ধরা পড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলার স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে এসব জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে।

ওই দিনই এ নিয়ে বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ১০ ও ১৮ জানুয়ারি দুই দিনে অবৈধভাবে মোট ৬৮টি জন্ম নিবন্ধন হয়।

এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইসমাইল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দফায় বেশ কিছু জন্ম নিবন্ধন হয়েছে আমার ওয়ার্ডে। এগুলোর বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের কেউ অবগত নন।”

Also Read: কার্যক্রম বন্ধ, তার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন হল কীভাবে?

এসব জন্ম নিবন্ধনের বেশির ভাগে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে জামালপুর, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা থানায় জিডি করে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বর্তমানে ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ওই ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী রহিম উদ্দিন বলেন, “সর্বপ্রথম ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ কারচুপি ধরা পড়ে গত ৮ জানুয়ারি। তাদের কাছ থেকে শুনে ১০ জানুয়ারি আমি সার্ভারে গিয়ে দেখি আমরা যতগুলো আবেদন পেয়েছি এবং ইনপুট করেছি, তার চেয়ে ১৮টি বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে।”

বিষয়টি তৎক্ষনাৎ কাউন্সিলরকে জানিয়ে হালিশহর থানায় জিডি করা হয় বলে জানান তিনি।

একইভাবে গত ১৮ জানুয়ারি আরও ৫০টি জন্ম নিবন্ধন হয়েছে জানিয়ে রহিম বলেন, “আমরা ইনপুট না দেয়ার পরও বাইরে থেকে কিছু ইনপুট হয়েছে। সে বিষয়টিও আমরা থানায় অবহিত করেছি।”

১২ জানুয়ারি ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১০টি জন্ম নিবন্ধনের বিষয় ধরা পড়ার কথা জানিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। তারাও জিডি করার পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন।

নিবন্ধিতদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চকরিয়া, কক্সবাজার এলাকার কথা উল্লেখ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওইসব নিবন্ধন বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু বন্ধ রেখেছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নির্দেশনা এবং ওগুলো বাতিল করলে পুনরায় ইস্যু করা হবে।”

একইভাবে চারটি জন্ম নিবন্ধন হয় ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে। আর সবশেষ ২১ জানুয়ারি ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে এমন আরও ৮৪টি জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা ঘটে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সাইফুদ্দিন জানান, শনিবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের জন্ম নিবন্ধন সহকারী সকাল ১০টা থেকে ১টার মধ্যে ১৫টি জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ইনপুট করে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেখানে ৯৯টি হয়ে গেছে। যেগুলোর বেশিরভাগের স্থায়ী ঠিকানা নেত্রকোণা, ভোলা, বান্দরবানসহ বিভিন্ন জেলা।

“অতিরিক্ত ৮৪টি জন্ম নিবন্ধন হওয়ায় আমরা বুঝতে পারি, সার্ভার পাসওয়ার্ড হ্যাক করে এটি করা হয়েছে। বিষয়টি সাথে সাথে আমরা পতেঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে জানিয়েছি।”

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, “আমরা দুইটি জিডির বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র সার্ভার আইডি হ্যাক করে এসব জন্ম নিবন্ধন করছে।

“এসব অভিযোগের বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছি।”

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক বদিউল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এর আগে ২০২১ সালে জন্ম নিবন্ধন ও সনদ ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে সাতটি ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে চারটিসহ মোট ১৮টি জন্ম নিবন্ধন করা হয়।

এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে করা মামলাটিও তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

ওই ঘটনায় যশোর থেকে আশরাফুল আলম নামে এক কম্পিউটার দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গত নভেম্বর মাসে।