“শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে,” বলেন তিনি।
Published : 17 Feb 2023, 08:37 PM
পার্বত্য এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি ‘খুবই নাজুক’ অভিযোগ করে জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ঊষাতন তালুকদার দাবি করেছেন, নিরাপত্তাহীনতায় পাহাড়িরা নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
তার কথায়, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা, সেটা সরকারও স্বীকৃতি দিয়েছে। এবং এই সমস্যা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা সময়ের দাবি। একমাত্র পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই যা সম্ভব।
“যতক্ষণ না দেশের সচেতন নাগরিক এগিয়ে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে-আমাকে এই চুক্তির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। অহেতুক কারণ দেখিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আজ একটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য বাংলার মানুষ যদি এই চুক্তির মর্ম না বুঝে- তার বাস্তবায়ন কঠিন হবে। সরকারকে সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের জে এম সেন হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি অশান্ত থাকে, এই বাংলা শান্ত থাকতে পারে না। তাই আসুন আমাদের এই অধিকারের আন্দোলনে বাংলার ১৬ কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করি। আপনারা পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তাদেরকে বুকে আগলিয়ে ধরে রাখতে হবে। তারা বেশি কিছু চায় না।
“তারা চায়, নিজ ভূমিতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে। এই জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণের বেঁচে থাকার রাস্তা যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়। আর কোনো বিলম্ব, কালক্ষপেণ নয়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আপনারা সকলেই আন্তরিক হয়ে এগিয়ে আসুন।”
জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “সংগঠনের মধ্য দিয়ে কোনো দল তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইতিহাসের দাবিতে এবং বাস্তবতার কারণে এই দল গঠিত হয়েছে।
“দেশভাগ, কাপ্তাই বাঁধ, সংবিধানে বাঙালিকরণের মতো ক্ষত জুম্ম জনগণকে জর্জরিত করেছিল। অধিকারহীন এই জনগোষ্ঠীকে মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচানোর জন্য এম এন লারমারা এগিয়ে এসেছিলেন।”
রাঙামাটির সাবেক এমপি ঊষাতন বলেন, “দীর্ঘ দুই যুগ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হল ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে- আজ ২৫ বছর পরও স্বয়ং যে সরকার চুক্তির স্বাক্ষর করেছে, সেই সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে নাই।
“আইনশৃঙ্খলা, ভূমি অধিকার, শরণার্থী পুনর্বাসন দেওয়া হয় নাই। শুধু চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি তা মুখে বললে হবে না, বাস্তবে কী হয়েছে- সেটা সাধারণ জনগণ বোঝে। এজন্য আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অশোক সাহা, জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাবুল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, পরিষদের দক্ষিণ জেলা সভাপতি তাপস হোড় ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার চৌধুরী, বাসদ চট্টগ্রামের আল কাদেরী জয়, ঐক্য ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, যুব ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলা সহ সভাপতি প্রীতম দাশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা মিরাজ উদ্দিন ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা।