চট্টগ্রামে ‘সৃজিত বন’ কেটে পার্ক বানানোর অভিযোগ জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে

উপকূলীয় বন বিভাগের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়াই তাদের সৃজিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কেটে সমতল করছে জেলা প্রশাসন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2023, 08:32 AM
Updated : 6 June 2023, 08:32 AM

সীতাকুণ্ডের সাগর তীরে একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন; আর সেই কাজ করতে গিয়ে বনবিভাগের ‘সৃজিত উপকূলীয় বন’ ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে।  

উপকূলীয় বন বিভাগের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়াই তাদের সৃজিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কেটে সমতল করছে জেলা প্রশাসন।

তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হচ্ছে, অবৈধ দখলে থাকা এসব এলাকা খাস খতিয়ানভুক্ত এবং সেখানে ‘পাখির অভয়ারণ্য’ তৈরি করে ১০ হাজারের মত নতুন বৃক্ষরোপণ করা হবে।

চট্টগ্রাম শহরের অদূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর মৌজার অধীন উত্তর কাট্টলী সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলে লাগোয়া এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সেখানেই হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বিনোদন পার্ক। একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং পাখির অভয়ারণ্য করা হবে সেখানে।  

চট্টগ্রাম বনবিভাগের সদর রেঞ্জ অফিসার রাশেদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা প্রশাসন ওই এলাকায় পার্ক করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু সেখানে আমাদের সৃজিত বন রয়েছে। সেটি কাটার জন্য প্রক্রিয়া কী হবে? বন বিভাগ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে।

“শনিবার থেকে ওই এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের সৃজিত বেশকিছু কাটা কেওড়া, বাইন ও গেওয়া গাছ পেয়েছি, সেগুলো আমাদের আওতায় নিয়েছি।”

উপকূলীয় বন বিভাগের সৃজিত ১২২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের বন কেটে ফেলা হয়েছে এবং মাটিও কাটা হয়েছে জানিয়ে রেঞ্জ অফিসার বলেন, “বন বিভাগের সৃজিত ১২টি কেওড়া গাছ এবং কয়েক হাজার বাইন ও গেওয়া গাছ কাটা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। কেওড়া গাছের ৪০টি টুকরো আমরা উদ্ধার করেছি।”

সোমবার বিকালে ঊপকূলের ছলিমপুর মৌজার ওই অংশে গিয়ে দেখা যায়, কালু শাহ পাড়া এলাকার ডিসি পার্কের লেকের অপর পাড়ে সাগর তীরের ম্যানগ্রোভ বনে টিনের সীমানা দিয়ে তিনটি এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে মাটি কাটা হচ্ছে। সেখানকার কিছু গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।

কয়েকজন আনসার সদস্য ওই এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। ওই পার্কের সড়কে ‘ডিসি পার্কের উন্নয়ন কাজ চলছে’ সাইনবোর্ড বসিয়ে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় সৃজিত বনের মালিকানা বন বিভাগের। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় বন কেটে ফেলছে। আমরা সোমবারে বিষয়টি জেনেছি। টিনের বেড়া দিয়ে তারা কাজ শুরু করেছে।”

কী পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে ডিএফও আবদুর রহমান বলেন, “আমরা এ ঘটনা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব।”

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, “উত্তর কাট্টলীর ওই জায়গা আগে অবৈধ দখলে ছিল। ওই এলাকার মোট ১৯৪ একর জমি আমরা দখলমুক্ত করে ডিসি পার্ক করেছি এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি।

“সেখানে ওয়াচ টাওয়ার ও পাখির অভয়ারণ্য হবে। সেজন্য আট থেকে দশ হাজার ফলজ ও বনজ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ওই জায়গা এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত এবং সেখানে রাস্তা করার জন্য নিয়ম মেনেই মাটি কাটা হচ্ছে। ওই বনের কোনো গাছ কাটা হয়নি।”

অবৈধ দখলে থাকার সময় রাসায়নিক দিয়ে মেরে ফেলা কিছু গাছ অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় যখন নতুন জমি (চর) ওঠে, শুরুতে তা ‘খাস’ থাকে এবং সেখানে উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে বন সৃজন করা হয়।

পরে বন আইনের ৪ ধারায় প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। ছলিমপুর মৌজার উত্তর কাট্টলীর ওই স্থানে বন বিভাগের সৃজিত বন রয়েছে। ১৯৮৩-১৯৮৪ এবং পরে ১৯৯৮ সালে দুই ধাপে ওই ম্যানগ্রোভ বন সৃজিত হয়।

ছলিমপুর মৌজায় দুইশ হেক্টরের মত উপকূলীয় বন রয়েছে বলে জানান বন বিভাগের কর্মকর্তারা।