পুলিশ কর্মকর্তা অতনু জানান, চট্টগ্রামে থাকলেও জয়ন্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সেখানেও তার ব্যবসা আছে। গত ৫ অগাস্ট ছোট ভাই প্রবীরকে ছিনতাইয়ের তথ্য দিয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যান। ছিনতাই হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সেখান থেকে এসে সোনার বারগুলো নিয়ে বাসায় স্ত্রীর কাছে রেখে আবার চলে যান।
Published : 09 Aug 2023, 08:56 PM
চট্টগ্রামের ‘স্বর্ণ গলি’ খ্যাত হাজারি গলিতে আছে ব্যবসা, সে সুবাদে জানা থাকে বিভিন্ন দোকানীর সোনা আনা নেয়ার তথ্য। আর সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে ছোট ভাইকে দিয়ে করান ছিনতাই। পরে আবার ছিনতাইয়ের শিকার দোকানীদের সঙ্গে মধ্যস্ততা করে টাকার বিনিময়ে পাইয়ে দেন সেই সোনা।
চট্টগ্রামে সোনার বার ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই দুই সহোদরের সন্ধান পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাই ও পরিকল্পনায় জড়িত চারজন এবং লুট করা সোনা হেফাজতে রাখার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করে ছয়টি বার ও বিক্রির ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেন- প্রবীর বণিক (৪৪), জয়ন্ত বণিক (৪৮), আব্দুর রউফ (৫২) ও মাঈনুদ্দীন হাসান তূষার (৩৮) ও জয়ন্তের স্ত্রী শ্রাবণী বণিক (৩৪)।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৬ অগাস্ট ভোরে হাজির গলির মুখ থেকে পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪টি সোনার বার ছিনতাই করে চার ব্যক্তি। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী হিসেবে জয়ন্ত ও প্রবীরের নাম জানতে পারে।
“এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তারের পর হাজির গলির এনডিসি আতিক অর্কিড ভবনে জয়ন্ত বণিকের বাসায় অভিযান চালিয়ে বুধবার তার স্ত্রীর কাছ থেকে ছয়টি সোনার বার ও ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকার উদ্ধার করা হয়।”
সহকারী কমিশনার অতনু জানান, এক সময় হাজারি গলিতে সোনার দোকানে কাজ করা জয়ন্ত এখন সেখানে নিজেই ব্যবসায় জড়িত। যার কারণে কোন ব্যবসায়ী কোথায় সোনা আনানেয়া করেন, সেগুলো তার জানা ছিল। বিভিন্ন সময়ে সে তার ছোট ভাই প্রবীর কিংবা অন্যদের মাধ্যমে আনানেয়ার সময় সোনা ছিনতাই করাতেন তিনি।
“যে ব্যবসায়ীর স্বর্ণ ছিনতাই হত, পরবর্তীতে জয়ন্ত তার সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে মধ্যস্থতা করত, এবং টাকার বিনিময়ে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণ ফিরিয়ে দিত।”
পুলিশ কর্মকর্তা অতনু বলেন, “ছিনতাই বা চুরির বিষয়টি ব্যবসায়ীরা পুলিশকে না জানিয়ে নিজেরাই মধ্যস্থতা করে ফিরিয়ে নেন। আবার অনেক সময় ছিনতাই বা চুরির বিষয়টি গোপন রাখেন, যার কারণে বিভিন্ন সময় জয়ন্ত এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটালেও কেউ বুঝতে পারত না।”
পুলিশ জানায়, হাজারি গলির পিয়াসী মার্কেটের বনলতা কাটিং সেন্টার নামে একটি অলঙ্কার তৈরির কারখানার ব্যবস্থাপন কনক ধরের ১৪টি সোনার বার নিয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা জানতে পেরেছিলেন জয়ন্ত। ৬ অগাস্ট ভোরে দামপাড়া বাস কাউন্টারে যাওয়ার পথে হাজির গলির মুখে বনফুলের সামনে পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে তার বারগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা অতনু জানান, চট্টগ্রামে থাকলেও জয়ন্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সেখানেও তার ব্যবসা আছে। গত ৫ অগাস্ট ছোট ভাই প্রবীরকে ছিনতাইয়ের তথ্য দিয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যান। ছিনতাই হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সেখান থেকে এসে সোনার বারগুলো নিয়ে বাসায় স্ত্রীর কাছে রেখে আবার চলে যান।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ছিনতাইয়ে জড়িতদের বিষয়ে খোঁজ পায়। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়ি থেকে মূল পরিকল্পনাকারী জয়ন্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে রাতে নগরীর ঘাটফরহাদবেগ থেকে প্রবীরকে এবং বাকলিয়া থেকে রউফ ও তূষারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের তথ্যে বুধবার হাজারি গলিতে জয়ন্তের বাসা থেকে সোনার বারগুলো উদ্ধার করা হয়। বাকী বার উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত আরো দুই জনকে ধরতে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানান সহকারী কমিশনার অতনু।
আদালত আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন রেখে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।