ইস্টার্ন ব্যাংককে প্রথম এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরীকে দ্বিতীয় বিবাদী করা হয়েছে আবেদনে।
Published : 26 Feb 2025, 10:02 PM
এগারো কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলার আবেদন করেছেন এক ব্যবসায়ী।
বুধবার চট্টগ্রামের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে নালিশী অভিযোগটি করেন ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মুর্তজা আলী।
বাদীর আইনজীবী হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ও সুদের টাকাসহ প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে।
“প্রতারণা, জাল নথি সৃজনসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিলে পুরো বিষয়টি জানা যাবে।”
ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসিকে প্রথম এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরীকে দ্বিতীয় বিবাদী করা হয়েছে আবেদনে।
অন্য বিবাদীরা হলেন- ব্যাংকটির এমডি ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার, পরিচালক এম গাজিউল হক, সেলিনা আলি, আনিস আহমেদ, মুফাক্কারুল ইসলাম খসরু, গাজী মো. সাখাওয়াত হোসাইন, কে জে এস বানু, জারা নামরীন, ড. তাওফিক আহমেদ চৌধুরী, রুসলান নাসির, কে এম তানজিব উল হক, খন্দকার আতিক-ই রাব্বানী ও মাহরীন নাসির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী জামান, রিয়াদ মাহমুদ চৌধুরী, এম খোরশেদ আনোয়ার, মাহমুদুন নবী চৌধুরী, এম খোরশেদ আলম ও মহিউদ্দিন আহমদ, ইউনিট হেড মো. ওবাইদুল ইসলাম, মাহদিয়ার রহমান, মো. মাইনুল হাসান ফয়সাল, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং হেড মো. জাবেদুল আলম এবং হেড অব কর্পোরেট বিজনেস সঞ্জয় দাশ।
অন্য বিবাদীরা হলেন- ব্যাংকটির হেড অব প্ল্যানিং আশরাফ উজ জামান, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মাসুদুল হক সরদার, হেড অব ট্রেড অপারেশন মো. মোকাদ্দাস, হেড অব ব্যাকিং মো. জাহিদ হোসাইন, হেড অব বিজনেস সৈয়দ জুলকার নাইন, হেড অব ডিজিটাল ফিন্যান্স আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী, চিফ টেকনোলজি অফিসার জাহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আবদুস সালাম, হেড অব কমিউনিকেশন জিয়াউল করিম, হিউম্যান রিসোর্সের প্রধান মনিরুল ইসলাম, হেড অব বিজনেস ইনফরমেশন মাসকুর রেজা, হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট মোস্তফা সরওয়ার, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, চান্দগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম, নিজাম উদ্দিন, ওআর নিজাম রোড শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মাইনুদ্দিন, কর্পোরেট এরিয়া হেড ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী এম এ কিউ সরওয়ার এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অডিট প্রধান মো. রেজাউল ইসলামকে।
মামলায় আবেদনে বলা হয়েছে, বাদী মুর্তজা আলী ২০১৭ সালে ইস্টার্ন ব্যাংকের ও আর নিজাম রোড শাখায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা নিজের সঞ্চয়ী হিসেবে জমা করেন।
সেই টাকা মুনাফাসহ ৬ কোটি ১০ লাখ টাকায় দাঁড়ালে মুর্তজা আলী তা ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় স্থানান্তর করেন।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুর্তুজা আলী চান্দগাঁও শাখায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) খোলেন এবং তার বিপরীতে একটি ওএসডি (সিকিউরড ওভারড্রাফট) ঋণের জন্য আবেদন করেন।
কিন্তু পরে বাদী ২০১৯ সালে বিদেশে থাকার সময় চান্দগাঁও শাখায় তার নামে দুটি ‘জাল’ সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি ‘জাল ঋণ’ অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে পারেন বলে আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
আইনজীবী হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বলেন, “বাদী বিদেশে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে তার সাক্ষর জাল করে ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ওই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে মূল টাকা ও লভ্যাংশের টাকাসহ প্রায় ১১কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার আইনি প্রক্রিয়া মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি যে অ্যামাউন্টের কথা বলছেন, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। উনি মনে করেন, টাকাটা পাননি, তাই কোর্টে আপিল করেছেন। তবে আমাদের কাছে ডকুমেন্টস আছে। ওনার দাবি আসলে কতটা সত্যি, কোর্ট প্রমাণ সাপেক্ষে সব দেখবে।
“তিনি যেহেতু কোর্টে গেছেন তাই আইন তার নিজের ধারায় গেছে। আমাদের কাছে যা ডকুমেন্টস আছে আমরা তা সাবমিট করব, উনার কাছে যে ডকুমেন্টস আছে উনি সাবমিট করবেন। কোর্টের যা রায় হবে তাই করা হবে। তার অভিযোগ ন্যায্য হলে তো সেই টাকাটা আমরা দিয়ে দিতাম।”