নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা নিয়ে ২০২৩ সালে আপত্তি উঠেছিল।
Published : 18 Feb 2025, 02:38 PM
এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বন্দর নগরীর কে সি দে রোডে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সর্বস্তরের মানুষ।
তিন বছর পর আবার পুরনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থানে নবনির্মিত শহীদ মিনারে এই আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ মিনার পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র এ ঘোষণা দেন। এসময় সেখানে একুশে উদযাপনের প্রস্তুতি হিসেবে পরিচ্ছন্নতা ও রঙের কাজ চলছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) উদ্যোগে।
নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা নিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আপত্তি তুলেছিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এরপর সে সময়ের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি নকশা সংশোধনের ১০টি সুপারিশ করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এরমধ্যে গত ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে উত্তর কাট্টলীর অস্থায়ী স্মৃতি সৌধ ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, কে সি দে রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের অস্থায়ী শহীদ মিনার- এই তিন স্থানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সেদিন মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সংশ্লিষ্টরা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
মঙ্গলবার পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “এতদিন অস্থায়ী শহীদ মিনার হিসেবে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে শহীদ মিনারকে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও সিটি করপোরেশনের একটা স্কুল।
“আশা করছি, চট্টগ্রামের মানুষ ২০২৫ সালে এসে ২১ ফেব্রুয়ারি নতুন যে স্থাপনা আগের যে জায়গা সেই ঐতিহ্যবাহী জায়গায় তারা ফুল দেবে। এবং এটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সার্বিকভাবে সিটি করপোরেশন যেহেতু আগে থেকেই এটার ব্যবস্থাপনায় ছিল, আর পুলিশের উনারা আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “আশা করছি, এবার আলাদা একটা আমেজে হবে। কারণ অতি আগ্রহ নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষায় আছে, শহীদ মিনারটি কীরকম হয়েছে। প্রথমবার তারা এখানে আসবে। এটার প্রতি নগরবাসীর আলাদা একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
“এটার যিনি ডিজাইন করেছেন, আর্কিটেক্ট উনি এখন আমেরিকাতে আছেন। এখানে মিনারটা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার (উচ্চতা) একটা প্ল্যান আছে। কিন্তু আমরা কাজ শুরু করিনি। উনি যদি আসেন বাড়ানোর কাজ বেশি সময় লাগবে না। সেটার জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। আল্টিমেটলি সেটার কাজও হবে।”
মেয়র বলেন, “মানুষ তো চায় এখানে আসতে। তাদের যে আগ্রহ আছে সেটাকে আমরা বন্ধ করে রাখব কেন। এটা আমাদের একটা ঐতিহ্য। এই জায়গাতেই সবাই আসতে চায়। আশা করছি এবার তাদের আশা পূর্ণ হবে।”
নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয় ১৯৬২ সালে। পরে ১৯৭৪ সালে এর নতুন রূপ দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয় ২৩২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে হয় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের আওতায় পাবলিক লাইব্রেরি ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হল অংশের সাথে সড়কের বিপরীত পাশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশকে একটি প্লাজা দিয়ে যুক্ত করার নকশা করা হয়।
ওই নকশা অনুসারে সড়কের উপর দিয়ে প্লাজা নির্মাণের জন্য আগের শহীদ মিনারটি ভেঙে ভিত্তি উঁচু করে একই আদলে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে সে সময়ের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে সভা করে পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়।
সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পুরনো শহীদ মিনার ভাঙা শুরু হয় এবং মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল মাঠে অস্থায়ী আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর।
অদূরে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের মাঠে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হত এরপর।
তারপর ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ নগরীর এক প্রান্তে উত্তর কাট্টলীতে সাগর তীরে অস্থায়ী স্মৃতি সৌধের উদ্বোধন করা হয়। সেদিন জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে একই স্থানে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবে। সেটিরও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গত বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল মাঠের অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। আর উত্তর কাট্টলীতে অস্থায়ী স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রিলেটেড লিংক...
চালু হয়নি চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, তিন স্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন
চট্টগ্রামের কাট্টলীতৈ অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কারে যেসব সুপারিশ করল বিশেষজ্ঞ ...
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ৩ সমস্যা চিহ্নিত
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার 'দৃশ্যমান' করার প্রস্তাব
নতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার 'আপাতত' সরানোর প্রস্তাব