আগামী ১৬ জানুয়ারি এই বিশেষজ্ঞ কমিটি শহীদ মিনার পরিদর্শন করবে। তারপর তারা সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।
Published : 10 Jan 2024, 06:57 PM
নিচের সড়ক থেকে ‘দৃশ্যমান না হওয়া’, প্লাজার ওপরে ওঠার সিঁড়ির ‘অনুপযুক্ততা’ এবং সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের অন্য অবকাঠামোর তুলনায় আকারে ‘ছোট’ মিনার- চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এই তিন সমস্যা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য স্থপতি ও প্রকৌশলীরা প্রাথমিকভাবে এসব সমস্যা চিহ্নিত করেছেন।
আগামী ১৬ জানুয়ারি এই বিশেষজ্ঞ কমিটি শহীদ মিনার পরিদর্শন করবে। তারপর তারা সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।
নতুন শহীদ মিনারটি রেখেই এসব সমস্যার সমধান করা যায় কিনা সে বিষয়েও ভাবছে কমিটি।
বুধবার নগর ভবনে বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে সভা করেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
সভায় মেয়র রেজাউল বলেন, “শহীদ মিনার আমাদের চেতনার উৎস। জনগণের মূল দাবি শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান করা। বর্তমানে শহীদ মিনারে যেতে ৪টা সিঁড়ি বেয়ে যেতে হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের উপযোগী নয়।
“এছাড়া সিঁড়িগুলোর গঠন এমন যে বড় কোনো আয়োজনে প্রচণ্ড ভিড় হলে সিঁড়ির কারণে মানুষের হাত-পা ভাঙবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের স্থপতিদের সাথে বসে দ্রুততম সময়ে এ সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।”
গত ২৮ অক্টোবর সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আওতায় ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন, ৮ তলা মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভবন ও নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর এক সভায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নতুন শহীদ মিনারের নকশা নিয়ে আপত্তি জানান। সেই প্রেক্ষিতে ২ ডিসেম্বর আরেকটি সভা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় নগরীর কে সি দে সড়কের এক পাশের মুসলিম ইনস্টিটিউট ও গণগ্রন্থাগার ভবনকে অন্য পাশের শহীদ মিনারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ২১ ফুট উঁচু একটি প্লাজার মাধ্যমে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আপত্তি মূলত এই প্লাজাটি নিয়ে। তাদের আপত্তি, প্লাজার কারণে নিচের সড়ক থেকে প্লাজার উপরে থাকা শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয়। এতে শহীদ মিনারের সার্বজনীনতা ও সহজগম্যতা নষ্ট হয়েছে।
২ ডিসেম্বরের সভায় এসব আপত্তি জানিয়ে ১৬ ডিসেম্বর নবনির্মিত শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন না করে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল মাঠের অস্থায়ী শহীদ মিনারে সেই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ২৪ ডিসেম্বর মেয়র রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমদ ইকবাল হায়দারকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রামের স্থপতি ও প্রকৌশলীদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্থপতি আশিক ইমরান, স্থপতি জেরিনা খান, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, স্থপতি সোহেল মোহাম্মদ শাকুর ও স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর।
বুধবারের সভার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি আশিক ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা যে মতামত দিয়েছেন তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি আমরা শহীদ মিনার পরিদর্শন করব।
“সবকিছু যাচাই করে যিনি এই প্রকল্পের নকশা করেছেন উনার সাথে বসব। তারপর সমাধানের পথ নির্ধারণ করব।”
নবনির্মিত শহীদ মিনারে কি কি সমস্যা পাওয়া গেছে জানতে চাইলে আশিক ইমরান বলেন, “শহীদ মিনারটি দৃশ্যমান নয়। দ্বিতীয়ত, এখন যে সিঁড়ির কয়েকটা লেয়ার আছে, তাতে অনেক ধাপ পেরিয়ে বয়স্করা ২১ ফেব্রুয়ারি বা ১৬ ডিসেম্বরের মত জাতীয় দিবসে প্লাজার উপরে শহীদ বেদিতে পৌঁছাতে পারবেন না। বেশি ভিড় হলে সিঁড়ির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও আছে।”
স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, “আগের শহীদ মিনারটি মাটি থেকে ১৫-১৬ ফুট উপরে ছিল। কিন্তু এখন প্লাজার কারণে সেটা মাটি থেকে অনেক উপরে উঠে গেছে। কিন্তু আগের একই মাপের রয়ে গেছে।
“ফলে শহীদ মিনারের যে মনুমেন্টাল ফিল, সেটা আসছে না। মানে আবেদনটা হারিয়ে গেছে। সম্ভাব্য সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি বিভাগসহ আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। এই কাঠামো রেখে বিকল্প কোনো উপায়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায় কিনা সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।”
বুধবারের সভায় চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব লুৎফুর রহমান, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদরুল আলম খান ও নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। তখন ব্যয় ধরা হয় ২৩২ কোটি টাকা। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে হয় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
সড়কের দুই পাশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট উপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হয়। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে।
শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, মিউজিয়াম, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়, তাতে আগে শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভেঙে পুরনো নকশা অপরিবর্তিত রেখে আরও উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনারের কাঠামো।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ‘দৃশ্যমান’ করার প্রস্তাব
এটি নির্মাণ করতে ২০২১ সালে মেয়রের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে সভা করে পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুরো কমপ্লেক্সের নকশাও উপস্থাপন করা হয় সভায়।
মেয়রের মধ্যস্থতায় পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে আদল অপরিবর্তিত রেখে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠে অস্থায়ী আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সে সিদ্ধান্ত মতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুরনো শহীদ মিনার ভাঙা হয়।
১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে।
নবনির্মিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নকশা করেছে স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থাপত্য বিভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ।