পরে একই স্থানে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।
Published : 23 Mar 2024, 09:53 PM
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর চট্টগ্রামের কাট্টলীতে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
শনিবার নগরীর পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলীতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এই স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করা হয়।
এবারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে একই স্থানে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “ছয় দফা আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। চট্টগ্রাম বেতার থেকে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতার স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করা হয়। অপারেশন জ্যাকপট চট্টগ্রাম বন্দরে হয়েছে। এছাড়াও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামের অবদান অনস্বীকার্য।
“বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া প্রায় ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। আর স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মিলে প্রায় সাড়ে ২৩ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। আপনারা তুলনা করলে বুঝতে পারবেন কোন দল দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছে।”
মোজাম্মেল হক বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি। তারা এখনো বাংলাদেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। এই জায়গাটাও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন স্বাধীনতাবিরোধীর বংশধরদের কাছ থেকে উদ্ধার করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।
“যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না তাদের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধু নিজে ধারণ না করে পরিবারের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে, সেজন্য মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম নগরীতে একটি শহীদ মিনার থাকলেও কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় সেই পুরনো শহীদ মিনারটিও ভেঙে নতুন শহীদ মিনার করা হয়েছে, যা দৃশ্যমান নয় এবং আকারে ছোট বলে আপত্তি উঠেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল থেকে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের ৫৩ বছর পর নগরীর মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে পাহাড়তলীর উত্তর কাট্টলী মৌজায় প্রস্তাবিত ৩০ একর জায়গার মধ্যে আপাতত ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩০ ফুট প্রস্থের জমির উপর জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অস্থায়ী ভিত্তিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলো।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “গত বছরের ২৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সময় সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী উত্তর কাট্টলীতে ৩০ একর জায়গায় নতুন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও যাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
“সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে এটির নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।”
জেলা প্রশাসক বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামের অনন্য অবদান রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, চট্টগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর নেই।
“এটা চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল। সে জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর প্রেক্ষিতে আমরা এখানে অস্থায়ীভাবে হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিসৌধ করেছি। জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে কম সময়ের মধ্যে এটির কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। আগামী ২৬ মার্চ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।”
চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “চট্টগ্রামে যে সকল বধ্যভূমি রয়েছে। সেগুলো সংরক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। পাহাড়তলীর খুলশীতে যে সকল বধ্যভূমি রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।
“মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মামলাজনিত কারণে এ কাজটি শেষ করতে পারেনি। এখন মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু ও এস এম আল মামুন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল।
শুরুতে ফিতা কেটে ও পুস্পস্তবক দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন মন্ত্রীসহ উপস্থিত অতিথিরা। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী ‘বিজয় নিশান’ স্মরণিকার মোড়ক উম্মোচন করেন।