Published : 05 May 2025, 07:03 PM
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রইস উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অবরোধ কর্মসুচি থেকে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তারের করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, অবরোধ কর্মসুচিতে হামলার প্রতিবাদের মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কালো পতাকা মিছিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রসেনার নেতারা।
সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে ইসলামী ফ্রন্টের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবরোধ কর্মসুচি পালন করে সংগঠনটি।
নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ছাত্র সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র সেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রইস উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে তারা দেশব্যাপী ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। এ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদীতে পুলিশ ‘হামলা’ চালিয়েছে।
তার অভিযোগ, চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ‘কিছু সন্ত্রাসীও’ লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশের সঙ্গে ‘হামলায়’ যোগ দেয়।
ছাত্রসেনার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদুল আলম দাবি করেন, তাদের অবরোধ কর্মসুচিতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৪ জন, চান্দগাঁও থানায় এলাকায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পাশাপাশি ব্রহ্মণবাড়িয়ায় এক জন ও গাজীপুরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য তারা পেয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে ‘হামলায়’ তাদের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং নরসিংদীতে এক জন কর্মী নিখোঁজ আছে বলেও দাবি করেন সাহেদুল।
সংবাদ সম্মেলন থেকে রইস উদ্দিন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, অবরোধে গ্রেপ্তার হওয়াদের মুক্তি এবং ‘হামলাকারী পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মিডিয়া সেলের দায়িত্বরত এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা সুফিবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুফিবাদীরা কারো ওপর হামলা করে না। ২৪ এর গণ অভ্যুত্থানে হেলমেট বাহিনী ছিল। এখনও তারা চলে গিয়ে নতুন আরেকটি বাহিনীযুক্ত হয়েছে। যারা আমাদের নেতকর্মীদের ওপর হামলা করেছে।”
কারা এ হামলার সাথে জড়িত ছিল– সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফেইসবুকে অনেকে লাইভ করেছে। সেখানে অনেকেই কমেন্ট করে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করেছে। সবাই জানে কারা মব জাস্টিস করছে। তাদের গ্রেপ্তার দাবি জানাচ্ছি।
“জুলাই বিপ্লবে আমাদের অনেকেই আহত হয়েছে। ২৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল। যার কারণে এ আন্দোলনে আমাদেরকে ছোট করে দেখা যাবে না।”
দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সকাল থেকে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি, সল্টগোলা ক্রসিং, হাটাহাজারী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, নাজিরহাট সড়কের বিভিন্ন অংশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মুরাদপুর রেলগেইট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেখানে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল লাইনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তখন তাদের ধাওয়া করে। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, তখন পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে সুন্নীয়া মাদ্রাসা সড়কে ঢুকিয়ে দেয়। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করতে দেখা যায়।
গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুরের হায়দারাবাদ এলাকায় একটি মসজিদের ইমাম ও খতিব রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘শিশু বলাৎকারের’ অভিযোগ তুলে গাছে বেঁধে মারধর করে একদল মানুষ। পরে তাকে পুলিশের সোপর্দ করে। পরদিন ভোরে কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
রইসের মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড দাবি করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত।
পুরনো খবর
রইস হত্যা: চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া