Published : 05 May 2025, 09:58 PM
চট্টগ্রাম নগরীতে খালে ভেসে আসা লাশটির পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার এসআই বাহার মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লাশটি আবদুর রহিম নামে এক যুবকের। ভোলার লালমোহন উপজেলায় তার বাড়ি; চট্টগ্রামে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
রহিমের ফুফাত ভাই মো. নোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘাড় ও পেটের কাটা দাগ দেখে তারা রহিমের লাশ চিনতে পারেন।
নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকায় গত শনিবার খালে ভেসে আসে রহিমের লাশ। উদ্ধারের পর এর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন কোতোয়ালী থানার এসআই বাহার মিয়া।
তিনি বলেন, লাশটি পানিতে ফুলে যায়। প্রাথমিকভাবে তার শরীরে জখমের দাগ ছিল না।
“পানিতে তার হাতগুলো বাঁকা হয়ে থাকায় মনে হয়েছিল হাত বাঁধা। কিন্তু পানি থেকে লাশ তোলার পর দেখা গেছে বাঁধা ছিল না।”
বাহার মিয়া বলেন, “আবদুর রহিম তার ফুফাত ভাইয়ের অধীনে চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত ১ মে একটি ফোন পেয়ে তিনি সাইট (যে নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করেন) থেকে বের হয়েছিলেন বলে তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন।”
এটি হত্যাকাণ্ড কিনা, সেটা জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন বলে জানান এসআই বাহার।
রহিমের ফুফাত ভাই নোমান বলেন, ২০০৮ সালে রহিম তার সঙ্গে চট্টগ্রাম আসেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অধীনেই কাজ করেন। চান্দগাঁও এক কিলোমিটার এলাকায় অলিউল্লাহ হাউজিং সোসাইটির একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করছিলেন।
রহিমের সহকর্মীদের বরাতে তিনি বলেন, “সাইটের অন্যান্য মিস্ত্রির সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে রহিম চা খেতে নেমেছিল। কিন্তু সে চা না খেয়ে একা বসেছিল। বেলা ১১টার দিকে তার কাছে একটা ফোন আসে এবং তাকে চান্দগাঁও থানার সামনে যেতে বলে। সেই ফোন পেয়ে সাইট থেকে বের হওয়ার পর আর রহিমের সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুই দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়।”
নোমান বলেন, “অন্যান্য মিস্ত্রির কাছে শুনেছি, কয়েক মাস ধরে রহিম মোবাইলে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়েছিল। গত মাসের মাঝামাঝি কোনো এক বিদেশি নম্বর থেকে তার (রহিমের) কাছে ফোন এসেছিল এবং আইফোন ও আইপ্যাডসহ তার জন্য চার লাখ টাকার মালামাল পাঠানোর কথা জানায়।
“এসব মালামাল ঢাকা বিমানবন্দরে এসেছে এবং সেখান থেকে ছাড় করানোর জন্য টাকার প্রয়োজন বলে রহিমের কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকায় আদায় করেছে। কিন্তু অপর দিক থেকে সাড়া না পাওয়ায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল।”
নোমানের ভাষ্য, বেশ কয়েক দিন ধরে রহিম মনমরা হয়ে ছিলেন। সমস্যা কী জানতে চাইলেও বলতেন না।
নোমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ফোন দিয়েছিলাম ছাদ ঢালাইয়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য। তার দুটি নম্বরের একটি নম্বরেও সে ফোন ধরেনি। কখনও কখনও ফোন কেটে দিয়েছে, আবার কখনও ফোন বন্ধ করে আবার খুলেছে। এভাবে শুক্রবার পর্যন্ত তার ফোন খোলা পাওয়া গেছে।
নোমান বলেন, “রহিমের খোঁজ না পেয়ে আমি তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, রহিম বুধবার সকালে পাঁচ হাজার এবং সন্ধ্যায় ১২ হাজার টাকা আনিয়েছিল। আবার সাইট খরচের জন্য আমারও কিছু টাকা তার কাছে ছিল। সেগুলো সব সে খরচ করে ফেলেছে।
নোমান বলেন, “রহিমের বাবা শনিবার সন্ধ্যার আগে ভোলা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। তাকে নিয়ে আমি প্রথমে র্যাব কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের চান্দগাঁও থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
“সেখানে গিয়ে ছবি দেখানোর পর তারা আমাদের কোতোয়ালী থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানে গিয়ে কথা বলার পর রোববার আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে রহিমের লাশ শনাক্ত করি।”
নোমান বলেন, “পানিতে লাশ ফুলে চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। বছর কয়েক আগে রহিমের ঘারে একটা অপারেশন হয়েছিল। সেখানে একটা মোটা দাগ আছে। আবার ২০১৪ সালে সাইটে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে রহিমের পেটে লোহার রড ঢুকে গিয়েছিল, সেখানেও দুইটা দাগ আছে।
“ঘাড় ও পেটের দাগগুলো দেখে মূলত আমরা রহিমের লাশ শনাক্ত করি।”
আরও পড়ুন-