“চট্টগ্রামের অবকাঠামো যদি আমরা ডেভলপ করতে না পারি তাহলে ইনফ্যাক্ট আমরা বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারব না,” বলেন তিনি।
Published : 11 Nov 2024, 09:32 PM
চট্টগ্রামের জন্য ‘নগর সরকারের’ প্রয়োজনীয়তা কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
তবে নগর সরকার না থাকায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনায় ও সমন্বয়ের সীমাবদ্ধতা জয় করতে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ গঠিত কমিটির সঙ্গে সভায় মেয়র আবারও নগর সরকার প্রসঙ্গ তোলেন।
আদালতের রায়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনও বন্দর নগরীর আগের তিন মেয়রের মত সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য সিটি গভার্নমেন্ট বা নগর সরকারের দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় তিনি নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এক সপ্তাহ পর সোমবারের সভায় ফের তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের বিকাশে সিটি গর্ভনমেন্ট দরকার। সেন্ট্রাল গর্ভনমেন্টকে আমরা অলরেডি বুঝিয়েছি যে, একটা জিনিস আমাদের খুব দরকার সেটা হচ্ছে- নগর সরকার। এই যে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি আপনার যারা এসেছেন, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আপনারা বলছেন যে এটার-ওটার অনুমতি লাগবে বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও নেই।
“অথচ সিটি গর্ভনমেন্ট যদি থাকত তাহলে সিটি মেয়র হিসেবে আমি আজকে সব জায়গায় অনুমোদনের বিষয়টি সহজে করিয়ে নিতে পারতাম।”
দেশের অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আয়ের এত বড় একটি সেক্টর, অথচ চট্টগ্রামের বাইরে কিন্তু বন্দরের টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার জন্য যেখানে ঘাটতি হচ্ছে সে জায়গায় বন্দরের টাকা চলে যাচ্ছে। যদিও বন্দর চট্টগ্রামের।
“কাজেই চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পটাকে চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। এখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন আছে, এখানে কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো আছে। এখানে আপনার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটা ব্যাপার আছে এবং এখানে ট্রেড সেন্টার আছে। ব্যবসায়িক হাব হিসেবেও কিন্তু চট্টগ্রাম অত্যন্ত পরিচিত। কাজেই সব মিলিয়ে ভৌগোলিক কারণে আজকে চট্টগ্রাম কিন্তু অত্যন্ত ইম্পর্টেন্ট একটা জোনে আছে।”
“চট্টগ্রামের অবকাঠামো যদি আমরা ডেভলপ করতে না পারি তাহলে ইনফ্যাক্ট আমরা বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারব না,” বলেন তিনি।
শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, “আমি সবগুলো ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে বসব। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে নালা ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে ময়লার বিন রাখা নিশ্চিত করতে হবে।”
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “ডিসি মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে উনাকে বলেছি, যেখানে খাস জায়গা আছে অন্ততপক্ষে আমাকে এগুলো দিন। আমি সেখানে ডাম্পিং স্টেশন করতে চাই। আমি চাই না যে ময়লা আবর্জনার গন্ধ মানুষের নাকে ঢুকুক।”
পেশায় চিকিৎসক শাহাদাত বলেন, “শুধু গন্ধ না, পচনশীল বর্জ্য থেকে অনেক ফ্লাইসবর্ন ডিজিস হচ্ছে। সেগুলো বন্ধ করতে পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াব। আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন, আপনারা রাজপথে একটু স্ট্রংলি একটিভ হন। যারা ইচ্ছে করে ময়লা ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।”
বিপ্লব উদ্যানসহ সিটি করপোরেশনের স্থাপনাগুলোর আয় যাচাই করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “যে জায়গাগুলো থেকে ইনকাম দেওয়ার কথা সেখানে যদি আমরা ইনকাম না পাই, তাহলে সিটি করপোরেশন চালাব কীভাবে?
“বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে দেখলাম যে, একটা হরিলুট হয়েছে। আগের মেয়ররা একেকজন অনেক টাকা নিয়ে গেছেন বিপ্লব উদ্যান থেকে। অথচ সিটি করপোরেশন একটা টাকাও পায়নি। চুক্তি করেছে মাত্র এক লক্ষ টাকা দিবে, তাও বছরে।”
দুর্নীতির আরো তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি যেটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাকা দিয়ে করা, সেটা বেদখল হয়ে গেছে। শপিং কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মার্কেটেও অসম চুক্তি করে হরিলুট করা হয়েছে। আমি প্রত্যেকটা মার্কেটের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং রাজস্ব আহরণের চেষ্টা করব।”
সভায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন এবং কমিটির সদস্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।