আগের দুদিন যেসব জায়গায় পানি ওঠেনি, রোববার সেসব এলাকাও ডুবেছে।
Published : 06 Aug 2023, 02:42 PM
চব্বিশ ঘণ্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে টানা তৃতীয় দিনের মত ডুবেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।
আগের দুদিন যেসব জায়গায় পানি ওঠেনি, রোববার সেসব এলাকাও ডুবেছে।
শনিবার মধ্যরাত থেকে নগরীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। অতি ভারি এই বর্ষণ চলে রোববার দুপুর পর্যন্ত। বেলা ১২টার পর বৃষ্টি কিছুটা কমে আসে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
“মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এমন বৃষ্টিপাত। আগামী দুদিনও এরকম বৃষ্টি হতে পারে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে ৮০-১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক।
রোববার বেলা ১২টায় আবহাওয়ার বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর প্রবল উপস্থিতির কারণে সমুদ্র বন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।
সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
রোববার সকালে নগরীর চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, আরাকান রোড, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাকলিয়া, হালিশহর, বড়পোল, রেয়াজউদ্দিন বাজার, তিন পোলের মাথা, জুবিলী রোড, সল্টগোলা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা যায়।
অনেক এলাকায় সড়ক ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নগরীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই জলাবদ্ধতায় চরম বিপত্তিতে পড়ে নগরবাসী।
ডুবে থাকা সড়কে কোথায় নালা আর কোথায় গর্ত আছে বুঝতে না পেরে অতি সাবধানে পানি ডিঙিয়ে হাঁটাচলা করছিলেন পথচারীরা। কেউ কেউ সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে পার হওয়ার চেষ্টা করেন।
সকাল থেকে নগরীতে যানবাহন ছিল হাতে গোনা। অল্প যা যানবাহন চলাচল করেছে সেগুলোর চালকরা ভাড়া দাবি করেছেন দ্বিগুণ।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা হাসনাত করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই দিন বন্ধ ছিল তাই অফিসে যেতে হয়নি। আজ সকালে বের হয়ে দেখি পানি আরও বেড়েছে। প্রায় এক কোমর পানি। গাড়ি নেই। হেঁটেই আগ্রাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। পানি শেষ করে তারপর হয়ত গাড়ি পাব।”
চট্টগ্রাম ইপিজেডের কর্মরত মো. সাইফুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে শহরের নতুন নতুন জায়গায় পানি উঠেছে। সল্টগোলা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত রোডেও পানি উঠে গেছে।”
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়ৎদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে এখনো পানি ওঠেনি আমাদের এখানে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার পর পানি উঠেছিল চার ঘণ্টার মত। সেদিন অনেক গুদামেও পানি ঢুকে যায়।
“গতকাল শনিবারও পানি উঠেছে বেলা আড়াইটার পর। আজকেও আমরা ভয়ে আছি, হয়ত দুপুরের পর পানি উঠবে। চাক্তাই খালের স্লুইট গেটটা জোয়ারের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গুদাম ও বাসাবাড়ি ডুবে যাবে।”
জলাবদ্ধতা নিরসানে ৫৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবগুলো স্লুইস গেট এখনো কাজ শেষ হয়নি। সেগুলো চালু করা গেলে চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর অংশে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম হত।
“কয়েকটি স্লুইস গেটের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আসবে। তখন জোয়ারের সময় স্লুইস গেট বন্ধ রেখে আবার গেটের ভিতরে জমা পানি পাম্প আউট করা সম্ভব হবে। পুরোদমে ১৭টি স্লুইট গেইট চালু হতে আরো বছর খানেক সময় লাগবে।”
জলবাদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়ন করায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দাবি করে এক্ষেত্রে তাদের বেশি কিছু করণীয় নেই।
তবে সিডিএ’র দাবি, সিটি করপোরেশন খাল-নালা ঠিকমত পরিষ্কার না করায় পানি নামতে বেশি সময় লাগে।