নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ বাস্তবায়নে এই মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সহ সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া।
Published : 07 Dec 2024, 03:36 PM
চট্টগ্রামের একমাত্র এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে জিইসি র্যাম্প ‘নির্মাণ বন্ধের’ দাবি জানিয়েছে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে 'নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ বাস্তবায়নে এই মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল' বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সহ সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া।
এই সংগঠন মনে করছে, এই র্যাম্প তৈরি হলে নগরে যানজট ‘বাড়বে বই কমবে না’।
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “বিগত সরকারের আমলে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার মধ্যে অন্যতম লালখানবাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
“শুরু থেকেই বিতর্কিত এই প্রকল্পটি বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মতামত এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে বাস্তবায়ন করা হয়। পরিবর্তিত সময়ে এই এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প স্থাপন নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। সবশেষে বিতর্কিত বেশ কয়েকটি র্যাম্প প্রকল্প থেকে সাময়িক বাদ দেওয়া হলেও বাওয়া স্কুল ও জিইসি জাংশানের মাঝে হোটেল পেনিনসুলার সামনে থেকে প্রস্তাবিত র্যাম্পটি বাদ দেওয়া হয়নি।”
সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেছেন ‘অপরিকল্পিত ও ব্যক্তিস্বার্থে’ গৃহীত এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিরা প্রতিবাদ করার পরও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়নি।
“বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুতগতিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা জানতে চাই, কেন তা বন্ধ করা হচ্ছে না? কার স্বার্থে?
“ব্যক্তিস্বার্থে নয়, জনস্বার্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে কার্যকর করতে জিইসি র্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।”
এই র্যাম্প তৈরি হলে যানজট ‘বেড়ে যাবে’ জানিয়ে সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল এন্ড কলেজ (বাওয়া স্কুল) ও জিইসি জাংশানের মাঝে যে র্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে ওই জায়গা এমনিতেই অত্যন্ত যানজট প্রবণ এলাকা।
“প্রতিদিন সেখানে সকাল থেকেই রাত ৯-১০টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এখানে নতুন র্যাম্প তৈরি হলে মূল সড়কের প্রশস্থতা কমে গিয়ে জিইসি জাংশানে যানজট বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এমএম আলি সড়ক জাংশান, ওয়াসা এবং লালখান বাজার মোড়ে যানজটের তীব্রতা বেড়ে যাবে।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে এই প্রকৌশলী বলেন, “কারণ এ সকল জাংশানে নতুন করে ডান দিকের ঘোরা বেড়ে যাবে এবং র্যাম্পে উঠতে আবার ডান দিকে ও বাম দিকে ঘুরতে হবে, যা যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়াবে।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে কার্যকর করতে যে র্যাম্প টাইগারপাসে নামানো হয়েছে সেটাকে উঠার ও নামার র্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, “এর ফলে যে সব গাড়ি লালখান বাজার, হোটেল রেডিসন ব্লু থেকে আসবে তাদেরকে রাইট টার্ন নিতে হবে না। অথবা যে র্যাম্প টাইগারপাসে নামানো হয়েছে সেটাকে শুধুমাত্র উঠার র্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা
“আর যে র্যাম্প আমবাগানের দিকে নামানো হয়েছে, তা দিয়ে লালখান বাজারমুখী গাড়িও নামতে পারবে। শুধু প্রয়োজন হবে একটা সুপরিকল্পিত জাংশান ডিজাইন “
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ‘অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় র্যাম্প নামাচ্ছে ও উঠাচ্ছে’ অভিযোগ করে প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “যে সকল জায়গায় র্যাম্প নামাচ্ছে বা উঠাচ্ছে সেখানে নিচের মূল সড়কের প্রশস্থতা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে অগ্রাধিকার ভিত্তিক গণপরিবহন সিস্টেম বা র্যাপিড বাস ট্রানজিট চালু করা কঠিন হয়ে যাবে।
“আর বন্দরের কন্টেইনার চলাচলেও প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করবে, যা পণ্য পরিবহন গতিশীলতায় স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে। নিচের মূল সড়কে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকর হবে না।”
এক প্রশ্নের জবাবে সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “সিডিএ ৫টি র্যাম্প বাদ দেয়নি। বলেছে সাময়িক। পরে করবে আবার। এগুলো করার সময়, যারা এ বিষয়ে বলতে পারবে তাদের সাথে সিডিএ আলাপ করেনি।
“এর থেকে অনেক কম খরচে চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন সম্ভব ছিল। তিনবার সেমিনার করে তখনকার মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকেও বলা হয়েছে। কিন্তু উনারা বেছে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান, প্রকৌশলী এবিএমএ বাসেত, স্থপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম ও পরিবেশবিদ তসলিমা মুনা।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এক্সপ্রেসওয়েটির প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল গত সরকারের আমলে।
প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেরি হয়।
১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৫টি র্যাম্প আপাতত 'না'
চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে 'কিছু অসঙ্গতি' পেয়েছে তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: এবার র্যাম্প নিয়ে বাওয়া স্কুলের
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: পতেঙ্গা প্রান্তে 'উল্টো' ফলের শঙ্কা ট্রাফিক
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে র্যাম্প ছাড়াই
টাইগারপাস-সিআরবি সড়কে গাছ কেটে র্যাম্প নয়: দুই মন্ত্রীর নির্দেশ