চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একদিন পরে এক পরিবারের ঘর ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
Published : 17 Jun 2022, 09:42 PM
নির্বাচনে ‘নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ায়’ পরাজিত প্রার্থীদের অনুসারীরা এ হামলা করেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছে, ‘জমির বিরোধে’ এ হামলা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল গুণাগরী ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাথপাড়ায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নারায়ন নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে একদল যুবক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘরে হামলা চালায়। তারা আমার ভাই সুবল নাথের টিনের ঘর ভেঙে ফেলেছে।
“বৃষ্টির মধ্যেই সন্ত্রাসীরা এসেছিল। তারা আমার ঘরের বাইরে থেকে শিকল লাগিয়ে দিয়ে ভাঙচুর চালায় আমার ভাইয়ের ঘরে।”
পেশায় মোটর সাইকেল মেকানিক নারায়নের ঘরের পাশেই রিকশা চালক ভাই সুবল নাথের টিনের ঘর।
গত বুধবার বাঁশখালী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। তাতে কালীপুর ইউনিয়নে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ ন ম শাহাদাত আলম। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নোমান এবং ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার আসামি বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান।
নারায়ন নাথের অভিযোগ, ভোটের সময় তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। সে কারণে তাদের ঘর ভাঙা হয়েছে।
তবে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘর ভাঙার সাথে নির্বাচনী কোনো ইস্যু জড়িত নয়। রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তির সাথে সুবল দেবনাথের জায়গা নিয়ে বিরোধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে আদালতেও একটি মামলা আছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও অভিযোগ দেওয়া আছে।”
নির্বাচনের পর দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই হামলা চালিয়ে ঘর ভাঙা হয়েছে বলে ওসির ভাষ্য।
অন্যদিকে নারায়ন নাথ বলেছেন, “মাস তিনেক আগে থেকে জায়গা নিয়ে বিরোধ থাকলেও এতদিন হামলা হয়নি। যদি নির্বাচনের বিষয়টি জড়িত না থাকত তাহলে নির্বাচনের পর আজ সকালে এসে কেন ঘরে হামলা চালিয়েছে?”
পরাজিত দুই প্রার্থীকে তাদের প্রতিবেশী রেজাউল করিম এ ঘটনায় ‘ইন্ধন দিয়েছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নির্বাচনী ইস্যু কাজে লাগিয়ে তারা আমাদের ঘর ভেঙে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেছে। হামলার সময় তারা নির্বাচিত চেয়ারম্যানের নাম ধরেও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছিল।
“আগে রেজাউল করিমের সাথে সালিশে চেয়ারম্যান শাহাদাত আমাদের পক্ষে ছিলেন। জায়গার সিট অনুযায়ী যে পাশে রাস্তা আছে সেদিকে রাস্তা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন রেজাউলকে।”
হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনেছেন দাবি করে নারায়ন বলেন, “ঘরের দরজায় সিটকিনি লাগিয়ে দেওয়ায় আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি। জানালা দিয়ে হামলার ঘটনা ভাঙচুর করার সময় তারা আমাকে দেখে ফেলে।
“ওই সময় শাবল দিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করে এবং আমার মাটির ঘরের বেশকিছু অংশ ধসে যায়।”
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নোমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাস্তা নির্মাণ নিয়ে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সাথে পরিবারটির দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। যেটি ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানেন।
“তাদের নিজেদের বিরোধে ঘর ভাঙার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচনী সহিংসতা বলে রূপ দিচ্ছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য।”
নোমানের মত আমিনুর রহমানও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নির্বাচনের দিন রাতেই আমি শহরে চলে এসেছি। এখনও শহরে আছি, বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু জানি না।”