সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ রাসায়নিক রাখার কথা বলেনি বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
Published : 07 Jun 2022, 01:28 AM
ওই ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণে ৪১ জনের মৃত্যুর পর বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে রাসায়নিক রাখার অনুমতি না থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
এরপর পরিবেশ অধিদপ্তর জানাল, তাদের ছাড়পত্রও নেয়নি বেসরকারি এই কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ।
আগুন লাগার ঘটনার তৃতীয় দিন সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত ডিপোটি পরিদর্শন করেন এবং সেখান থেকে রাসায়নিকসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন।
এর আগে এই কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্যের চারটি কন্টেইনার শনাক্ত করার কথা জানিয়েছিল সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা পরিচালক মুফিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছ থেকে শুধু কন্টেইনার রাখার বিষয়ে ছাড়পত্র নিয়েছিল। তারা বলেছিল সেখানে কন্টেইনার ভর্তি ও খালি করবে। ফুড, পোল্ট্রি ফিড ও গার্মেন্টস আইটেম মিলিয়ে বেশ কিছু পণ্যের অনুমতি ছিল। কোন কেমিক্যাল (রাসায়নিক) রাখার পারমিশন নেয়নি।”
অগ্নিকাণ্ডের পর যদিও ডিপো কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, তাদের সব ধরনের অনুমোদনই রয়েছে।
মুফিদুল বলেন, “দুর্ঘটনাকবলিত ডিপো থেকে আজ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছি। বিষাক্ততা (টক্সিসিটি) যাচাইয়ের জন্য এসব নমুনা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে বলা যাবে, সেখানে কী ছিল এবং কেন এত বিস্ফোরণ হয়েছে।”
রোববার বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ডিপোটির রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ রাখার অনুমতি নেই। সেখানে দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ বা মজুদের নিয়ম না মানার ফলেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তার ধারণা।
নতুন একটি কন্টেইনার ডিপো স্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয় এবং পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মূল লাইসেন্স দিয়ে থাকে। তবে দাহ্য জাতীয় বা রাসায়নিক উপাদানের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের ছাড়পত্র লাগে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খান রোববার দাবি করেছিলেন, তাদের সব ধরনের অনুমতিই আছে এবং হাইড্রেজেন পার অক্সাইড সেখানে ছিল।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে উদ্ধার তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের সদস্যরা সোমবার চারটি রাসায়নিকের কন্টেইনার শনাক্ত করার কথাও সাংবাদিকদের জানান।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ছয়টি পৃথক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এ ঘটনার পর। তবে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কোথা থেকে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল এবং সেখানে কী ধরনের রাসায়নিক ছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মুফিদুল আলম বলেন, “একইসাথে ডিপোতে থাকা রাসায়নিকগুলো কতটুকু মানুষের জন্য ক্ষতিকর ছিল তাও আমরা পরীক্ষা করব। প্রতিবেদন পাবার পর করণীয় নির্ধারণ করা হবে।”
বিএম ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিভে যাবার পর অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান পরিবেশ অধিপ্তরের এই কর্মকর্তা।
সোমবারে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রামের কর্মকর্তারাও বিএম ডিপো থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছে পরীক্ষার জন্য।
ডিপোটিতে দুর্ঘটনার পর তৃতীয় দিনে আগুনের তীব্রতা কমে এলেও পুরোপুরি নেভেনি সেখানকার আগুন। তা নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। সেখানে এখনও ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর বিএম কন্টেইনার ডিপো এবং আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। রাসায়নিকের ধোঁয়ার ক্ষতির মাত্রা জানতে এর নমুনাও সোমবার সংগ্রহ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীরা।