চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণশীল উপধারা ‘বিএ.২’ শনাক্ত করার কথা জানিয়ে এটির কারণে সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
Published : 09 Feb 2022, 09:17 PM
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মূল্যায়ন নিয়ে একটি গবেষণায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) এক গবেষণায় এমন ফলাফল পেয়েছেন তারা।
এ কারণে চট্টগ্রাম জেলায় সংক্রমণ ও আক্রান্তের হার বেশি বলে গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলছেন এ গবেষণা দলের একজন সিভাসুর সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা।
গবেষণার অংশ হিসেবে নভেল করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে। এবার ১০টি নমুনা সংগ্রহ করে সার্স-সিওভি-২ বা নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়।
গবেষক দলের সদস্য সিভাসু এর সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সবকটি নমুনাতেই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “১০টি নমুনার মধ্যে সবকটিতে ওমিক্রন (বি.১.১৫২৯) ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে চারটি নমুনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের অধিকতর সংক্রমণশীল বিএ.২ শনাক্ত হয়েছে।”
তিনি জানান, গত ২০ থেকে ২২ জানুয়ারির মধ্যে সংগ্রহ করা নমুনা নিয়ে এ গবেষণা করা হয়। ওই সময়ে জেলায় সংক্রমণের হার ছিল ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি।
নগরীর নন্দনকানন, জালালাবাদ, কোতোয়ালী, চান্দগাঁও, বায়েজিদ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও চকবাজার এলাকার এবং হাটহাজারী উপজেলার মদনহাট, মাদার্শা ও ফটিকা এলাকার ১০ বাসিন্দার নমুনা নিয়ে এ গবেষণা করা হয়।
২৩ থেকে ৭৫ বছর বয়সী এসব ব্যক্তিদের প্রত্যেকের নমুনায় করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
সিকোয়েন্স করা নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মিউটেশন বা রূপান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডা. ইফতেখার।
“জিনোমে ক্রমাগত মিউটেশন হতে থাকে। একটি নমুনায় সর্বোচ্চ ৬৮টি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে। অতিমাত্রায় মিউটেশনে এক পর্যায়ে জিনোম পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে।”
স্বাস্থ্যবিধির উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আক্রান্তদের নমুনায় উচ্চ সংক্রমণশীল ধরন আছে, এ কারণেই শনাক্তের হার বেশি। তাই জনসমাগম স্থানসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা খুব জরুরি। না হলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।”
সিভাসুর গবেষক দলের সদস্যরা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে যাদের নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তাদের রোগের উপসর্গ খুবই মৃদু পর্যায়ের ছিল।
অধিকাংশের গলা ব্যথা, সর্দি ও মৃদু জ্বর ছাড়া মারাত্মক কোনো লক্ষণ যেমন- শ্বাসকষ্ট কিংবা অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়নি। আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি এবং কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করেনি।
সিভাসু উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নির্দেশনায় এবং সিভাসু এর পোল্ট্রি রিসার্চ ও ট্রেনিং সেন্টার (পিআরটিসি) এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এই গবেষক দলে আরও আছেন সিভাসু’র অধ্যাপক ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. প্রণেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।