বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে এর আরেকটি উপ ধরনের বিস্তার নাটকীয়ভাবে বাড়ছে কয়েকটি দেশে।
Published : 01 Feb 2022, 08:15 AM
বিজ্ঞানীরা ওমিক্রনের সাধারণ রূপটির নাম দিয়েছেন বিএ.১, বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে অধিকাংশ কোভিড সংক্রমণের জন্য এ ধরনটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই ওমিক্রনের আরেকটি উপধারা বিএ.২ ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু দেশে বিএ.১ কে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছে, যা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এই উপধারাটি সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
ওমিক্রনের ‘বর্ণচোরা’ উপধরন
পাবলিক ভাইরাস ট্র্যাকিং ডেটাবেজ ‘জিআইএসএআইডি’রতথ্য অনুযায়ী গত বছরের নভেম্বরে প্রথমবার ওমিক্রন ধরনটি শনাক্তের পর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী এর বিএ.১ ধরনটি।
কিন্তু কিছু কিছু দেশে বিএ.২ উপধারাটির সংক্রমণ এখন বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিএ.১ এবং বিএ.২ ছাড়াও ওমিক্রনের আরও দুটি উপধারা বিএ.১.১.৫২৯ এবং বিএ.৩ তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি। জিন বিন্যাসের বিবেচনায় সবগুলো উপ ধরনই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু যেসব মিউটেশনের কারণে এদের আলাদা উপধারা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেই জিনগত পরিবর্তনের কারণেই এদের প্রত্যেকের আচরণে কিছু পার্থক্য আছে।
ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার সেন্টারের কম্পিউটেশনাল ভাইরোলজিস্ট ট্রেভর বেডফোর্ড সার্স-কোভ-২ এর বিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন।
শুক্রবার টুইটারে তিনি লিখেছেন, ডেনমার্কে ৮২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৮ শতাংশ সংক্রমণের কারণ এখন বিএ.২।
জিআইএসএআইডি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ প্রকল্প থেকে উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণের পর ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তিনি।
ওমিক্রনের বিএ.১ সংস্করণটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এর আগের ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কিছুটা সহজ। এর কারণ সাধারণ পিসিআর পরীক্ষায় যে তিনটি জিনের উপস্থিতি খোঁজা হয়, তার একটি বিএ.১ এ থাকে না। ফলে যেসব নমুনায় ওই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, ধরে নেওয়া যায় সেগুলোর সংক্রমণের কারণ বিএ.১।
কিন্তু বিএ.২ সংস্করণটির ক্ষেত্রে ওই সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে ডেল্টাসহ আগের ধরনগুলোর মতো একই পদ্ধতিতে বিএ.২ কে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের। তারা জিআইএসএআইডির মত পাবলিক ভাইরাস ট্র্যাকিং ডেটাবেজে জমা পড়া উপাত্ত থেকে এ ভাইরাসের বিস্তার বোঝার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য ভেরিয়েন্টের মত বিএ.২ এর সংক্রমণও করোনাভাইরাস পরীক্ষার র্যাপিড কিট দিয়ে শনাক্ত করা যায়। তবে ওই সংক্রমণের জন্য কোন ভ্যারিয়েন্ট দায়ী, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
বেশি ছড়ায়?
প্রাথমিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতি সংক্রামক বিএ.১ ধরনটির চেয়েও বেশি সংক্রামক বিএ.২ উপধরনটি। তবে সেটা টিকার সুরক্ষাবলয় ভেদ করতে পারে- এমন কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি।
ডেনমার্কের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা, বিএ.২ উপধারাটির সংক্রমণ ক্ষমতা বিএ.১ এর চেয়ে দেড় গুণ বেশি হতে পারে, তবে ‘সম্ভবত’, এটা গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটায় না।
গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (এইচএসএ) বলছে, কারও শরীরে বিএ.২ সংক্রমণ ঘটলে তার পরিবারেও তা ছড়ানোর হার (১৩ দশমিক ৪ শতাংশ) ওমিক্রনের সাধারণ ধরনটির চেয়ে (১০ দশমিক ৩ শতাংশ) বেশি।
২৮ জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে এইচএসএ বলেছে, বিএ.২ ওপর কোভিড টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে অন্য ধরনগুলোর সঙ্গে তেমন কোনো পার্থক্যের প্রমাণ তারা পায়নি।
শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইগন ওজার বলেছেন, যারা বিএ.১ এ সংক্রমিত হয়েছিলেন, সেই অ্যান্টিবডির কারণে তারা বিএ.২ থেকে রক্ষা পাবেন কিনা, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
এ বিষয়টি নিয়ে ডেনমার্কেও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ সেখানে যেসব এলাকায় বিএ.১ এর সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ছিল, এখন সেখানে বিএ.২ এর বিস্তার বাড়ছে।
ইগন ওজার বলেন, “যদি আগের বিএ.১ সংস্করণটির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি বিএ.২ বিরুদ্ধে সুরক্ষা না দেয়, তাহলে মহামারীর এই ঢেউ ‘দুই কুঁজওয়ালা উটের মত’ হয়ে দাঁড়াবে। আসলে কী ঘটবে সেটা খুব দ্রুত জানা প্রয়োজন।”
“তবে এর মধ্যেও একটি সুখবর হল, টিকা এবং বুস্টার ডোজ এখনও মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে সুরক্ষা এবং মৃত্যু থেকে বাঁচাচ্ছে।”