সোঙ্গা চিতার যাত্রার আগে চট্টগ্রাম বন্দরে ইইউ ও ইতালির দূত

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রথম জাহাজ ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার আগে জাহাজীকরণ কার্যক্রম দেখে গেলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইতালির রাষ্ট্রদূত।

রোববার দুপুরে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে দেখার সময় দেশের তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ফারুক হাসানসহ ব্যবসায়ী নেতারাও ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি প্রথমবারের মতো ইউরোপের কোন দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ শনিবার জেটিতে ভেড়ে।

সোমবার ৯৮৩ টিইইউস পণ্য ভর্তি কন্টেইনার নিয়ে সরাসরি ইতালির উদ্দেশ্যে জাহাজটি রওনা দেবে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানান।

আর এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের কোনো বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মত।

বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয় অন্য দেশের বন্দর ঘুরে। সেখানে অপেক্ষায় থাকতে হয় বড় জাহাজের বুকিং পেতে। তাতে ইতালি পৌঁছাতে ৩০ দিনের কাছাকাছি সময় প্রয়োজন হয়।

এতে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, খরচও বাড়ে। প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ এটাও।

সরাসরি ইউরোপযাত্রা শুরু হলে সেই বাধা কমে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে নোঙ্গর করা ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এ সময় তাদের সাথে ছিলেন।

পণ্য পরিবহন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি ইউরোপের কোনো দেশে যাবে। আগে যেখানে ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মত সময় লাগতে সেখানে সময় কম লাগবে।

“চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এখন বিদেশি জাহাজের ওয়েটিং টাইম দুই দিনের বেশি লাগে না। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের বন্দরের চেয়েও এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক ভালো। এখান থেকে শুধু ইতালি নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের গন্তব্যেও সরাসরি জাহাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, “তৈরি পোশাক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত, যা বাংলাদেশ এবং ইইউর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। আমরা যদি এই সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই, তবে প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবে, হাই টেক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এ কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।”

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। করোনাকালেও ধারণক্ষমতা বেড়েছে, জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমিয়েছি। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালসহ অন্যান্য উদ্যোগ যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও অনেক বাড়বে।”

এর আগে সকালে বন্দর সম্মেলন কক্ষে দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ সভাপতি। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অগ্রগতির তথ্য রাষ্ট্রদূতদের সামনে তুলে ধরা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে আরেকটি জাহাজের পরীক্ষামূলক যাত্রা সফল হওয়ায় এবার নিয়মিত যাত্রা শুরু হচ্ছে ইউরোপের পথে। এখন থেকে দুটি জাহাজ নিয়মিত এই পথে পণ্য পরিবহন করবে।

অন্য জাহাজটি ‘ক্যাপ ফ্লোরেস’ গত ২৩ ডিসেম্বর খালি কন্টেইনার নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল।

ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকজন ক্রেতার আগ্রহেই ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালি সরসারি জাহাজ চলাচলের এই সেবা চালু করছে।