এবার দুর্গাপূজার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের আয়োজনে শনিবার ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক এই সংলাপ হয়।
সংলাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ বলেন, “অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু ৫০ বছর পর আজ তখনকার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
“রাষ্ট্রক্ষমতার মধুর জন্যই এই সাম্প্রদায়িকতাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ক্ষমতায় থাকতে চায় বলেই এটা করা হচ্ছে।”
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “ইতিহাসে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হামলা হয়েছে, তার নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিলাষ আর জমি দখলের লোভ।”
অধ্যাপক হোসাইন কবীর বলেন, “গুজব ছড়িয়ে একই স্টাইলে রামু, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর। আবার কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে উত্তম বড়ুয়া আর রসরাজই গ্রেপ্তার হয়।
“কিন্তু পুলিশ প্রহরায় ওয়াজ মাহফিলের নামে যেভাবে ধর্মীয় উন্মত্ততা ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। পান থেকে চুন খসলে আইসিটি আইনে নাগরিকরা গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু কওমি নেতাদের সাথে কম্প্রোমাইজ করা হয়।”
নারী আন্দোলনের কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, “আমরা কেন রুখে দাঁড়াই না? সরকারে কী করে জামাতি ভাবধারার লোকরা যুক্ত হয়? পরিবারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা সন্তানদের কী শেখাচ্ছি?”
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
বালাগাত উল্লাহ বলেন, “মনোজগত, সমাজ, পরিবার যতক্ষণ সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হবে না, ততক্ষণ উত্তরণ হবে না।”
অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “আমরা সমাজের যে স্তরেই থাকি না কেন হৃদয়ে সাম্প্রদায়িকতা লালন করছি। দিনে দিনে সমাজের শরীরে যে রোগ বাসা বেঁধেছে, তা একদিনে সারবে না। বছরের পর বছর ধরে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে এসেছি।”
সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটনে এক ধারার শিক্ষা নীতি এবং অবাধ সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ তৈরির উপর জোর দেন বক্তারা।
সংলাপে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ সভাপতি এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কয়েক বছর আগে এই সরকার পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনল, তা কী কারণে? এই শিক্ষানীতিতে উত্তরণের কোনো পথ নেই। তাই আরও বেশি মানুষকে কী করে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা যায় তা ভাবতে হবে।
“সরকারের কাছে দাবি জানাই, দেশব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে যে আক্রমণাত্মক প্রচারণা চলে সেগুলো বন্ধ করুন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপকর্ম চলছে তা বন্ধ করুন।”
অধ্যাপক হোসানই কবীর বলেন, “সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থা অসাম্প্রদায়িক হতে হবে। রাষ্ট্র ধর্ম রেখে আপনি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে পারবেন না। সম্প্রীতি মানুষের অন্তরে চাষ করতে হয়। এবং তা করতে হয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে। অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে, অসাম্প্রদায়িক সমাজ হয় না।”
এই সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা করে আপহোল্ডিং রাইটস অব মাইনোরিটিজ বিয়ন্ড বর্ডারস- সাউথ এশিয়া।
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপিএস, চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমদ।
সংলাপে অংশ নেন চট্টগ্রামের মহানগর পুলিশ অতিরিক্ত উপ কমিশনার আমিনুল ইসলাম, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এম এ নাসের, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আহম্মদ কবীর, কলেজ শিক্ষক মিনু মিত্র, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে আইনজীবী রুবেল পাল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রণব বল ও মিন্টু চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী উৎপল বড়ুয়া, সাংবাদিক মিজানুর রহমান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অ্যানি সেন।