দুনিয়াজোড়া আতঙ্ক নিয়ে আসা করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে একজন পুলিশ সদস্য বলেছেন, সাহস নিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, কোনোভাবেই মনোবল হারালে চলবে না।
Published : 03 May 2020, 08:02 PM
চট্টগ্রামে আক্রান্ত ১১ পুলিশ সদস্যের মধ্যে অরুণ চাকমা (৪০) নামের এই ট্রাফিক কনস্টেবলই প্রথম সুস্থ হলেন। নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর জোনে কর্মরত অরুণ রোববার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ব্যারাকে ফিরে যান। তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।
কনস্টেবল অরুণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন তার আক্রান্ত হওয়া থেকে সুস্থ হয়ে ব্যারাকে ফেরার পুরো ঘটনা।
তিনি জানান, ১২ এপ্রিল প্রথম যে ট্রাফিক কনস্টেবলের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল তার সঙ্গে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে একসাথে নগরীর জিইসি মোড়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এরপর গত ৭ এপ্রিল পুলিশের উদ্যোগে পরিবহন শ্রমিকদের ত্রাণ বিতরণ করে ব্যারাকে ফেরার পর রাতে সামান্য অসুস্থ বোধ করছিলেন তিনি।
“সারা দিন পরিশ্রম করেছি, মনে করলাম সে কারণে একটু হাতে ব্যথা ও শরীরের জ্বরের ভাব লাগছে। তাই নাপা এক্সট্রা খেয়েছিলাম। এতেই জ্বর কমে গেলেও হাত ব্যথা ছিল।”
“১০ এপ্রিল সকাল ৮টায় ডিউটিতে গিয়েই ‘সিক রিপোর্ট’ করে দামপাড়া পুলিশ লাইনের বিভাগীয় হাসপাতালে চলে আসি। সেখানে অসুস্থতার কথা জানানোর পর আমাকে মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় মাঝে মাঝে হাল্কা খুসখুসে কাশি হত জানিয়ে অরুন চাকমা বলেন, সেখানে নাপা আর খুসখুসে কাশির জন্য একটা ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তবে হাতে ব্যথা ছাড়া শরীরে জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্ট তার হয়নি।
তিনি বলেন, “১৬ এপ্রিল মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয় নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য। ১৯ এপ্রিল রাতে আমাকে জানানো হয়, রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। জেনারেল হাসপাতালে যেতে হবে।”
হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনেও মনোবল না হারিয়ে নিজেকে চাঙ্গা রাখার কথা জানান অরুণ।
“রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেখানে একটি ইলেকট্রিক কেটলি নিয়ে যাই আমি। সে কেটলিতে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা, রসুন দিয়ে নিজে গরম পানি ফুটিয়ে পান করতাম। একটি মগে ফুটানো সে গরম পানির সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে সে পানির ভাপ নিয়েছি দিনে চার থেকে পাঁচ বার। অন্য রোগীদেরও উৎসাহিত করেছি আমার মতো গরম পানির ভাপ নিতে।”
“গরম পানির এ পদ্ধতি অবলম্বন করে আমি এবং আমার কথা মতো অন্য যারা নিয়েছেন তারাও সুস্থ বোধ করছেন,” বলেন তিনি।
যে কেউই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে মন্তব্য করে অরুণ বলেন, “তবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এই সময়ে কেউ মনোবল হারালে চলবে না। মনোবল যাতে না হারায় সেজন্য প্রতিদিন রাঙামাটিতে পরিবারের সাথে কথা বলতাম। তাদেরও বলতাম যেন মনোবল না হারায়। তারাও মনোবল হারায়নি।
“২৭ এপ্রিল আমার দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুই দিন পর জানানো হয় রিপোর্ট নেগেটিভ। ৩০ এপ্রিল পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে শনিবার রাতেই চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন আমি সুস্থ হয়ে গেছি।”
এদিকে দুপুরে অরুণকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ। কোতোয়ালী থানা পুলিশের সদস্যরাও তাকে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
জেনারেল হাসপাতাল থেকে অরুণকে নিয়ে যাওয়া হয় দামপাড়া নগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে। সেখানে সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাকে পুনরায় ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যে সব পুলিশ সদস্য হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের শারীরিক অবস্থা সবার ভালো আছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আরও দুই জন পুলিশ সদস্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।