চট্টগ্রাম নগর কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে দুদকের আয়োজিত গণশুনানিতে উঠে এল নগরবাসীর নানা অভিযোগের কথা।
Published : 14 Oct 2019, 10:13 PM
মেয়রের সামনেই নাগরিকরা বললেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফ্ল্যাট বরাদ্দের নামে হচ্ছে টাকা আত্মসাৎ। জনবল নিয়োগে অনিয়ম চলছে। পরিচ্ছন্নতার কাজ ঠিকমত হয় না, নালা ও জমি বেদখল হয়ে যায়।
আর এসব অভিযোগ তারা করলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে।
এরকম ৬৯টি অভিযোগ শুনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও চট্টগ্রাম মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেরএর শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে এই গণশুনানি হয়।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উপস্থিতিতেই এ শুনানিতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, তালাক সনদে ঘুষ দাবি, টাকা না দিলে আর্বজনা পরিষ্কার না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে তদন্ত শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার।
শুনানিতে ব্যবসায়ী আবদুল মতিন অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের লেকসিটি প্রকল্পে প্লট দেওয়ার নামে ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সিটি করপোরেশনের সার্কেল–৫ এর রাজস্ব কর্মকর্তা (বরখাস্ত) জানে আলম।
“তিনি আমাকে জাল কাগজপত্র দেন। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেও দেয়নি। আমি প্রতারিত হয়েছি।”
এসময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকায় জানে আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও চলছে।
দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম দুই মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা বলেন সিটি করপোরেশনকে।
“২০১৬ সালে ট্রলি সংস্কার দেখিয়ে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বিল করে কোটি টাকা আত্মসাত করেন সুদীপ বসাক ও সংশ্লিষ্টরা।”
এছাড়া সাগরিকায় করপোরেশনের পাথর ডিপোতো হিসাবের গরমিলের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা সুদীপ বসাক আত্মসাত করেন বলেও অভিযোগ করেন শামসুল হুদা সিদ্দিকী।
শুনানিতে আরও একজন অভিযোগ করেন, ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার দুটি ওয়ে ব্রিজ (গাড়িসহ পণ্য পরিমাপক যন্ত্র) স্থাপন ও সরবরাহের কাজ এক চাচাতো ভাইকে দিয়েছেন সুদীপ বসাক।
এছাড়া জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সুদীপ বসাককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার তিন সহকর্মী।
এসময় মঞ্চে ডেকে নেওয়া হলে সুদীপ বসাক অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়ম-নীতি মেনেই সব করেছেন।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।
লালখান বাজার ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমদ মানিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মসজিদের জমিতে দোকান নির্মাণ করে ৭০ লাখ টাকা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, যারা শুনানিতে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন, তার কাছে গেছে তাদের কারও কারও সমাধান আগেই করে ফেলা যেত।
জবাবে শুনানিতে অংশ নেওয়া সেলিম চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খানসহ কমপক্ষে চারজন নাগরিক মেয়রকে বলেন, তার অফিসে তারা ঢুকতে পারেননি। সেখানে ঢোকা ‘খুব কঠিন’।
জবাবে মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, “আমার অফিস সবার জন্য খোলা। গেলে মনে হবে এটা অফিস না, খেলার মাঠ। সবসময় একশ জন লোক থাকে।”
নগরীর ষোলশহর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মামুন অভিযোগ করেন, টাকা না দিলে ওই এলাকা থেকে আর্বজনা নেওয়া হয় না। ডাস্টবিন ভর্তি না হলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যায় না।
জবাবে মেয়র নাছির বলেন, “দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ডোর টু ডোর আর্বজনা সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। আপনার হোল্ডিং নম্বর দেন। অবশ্যই ময়লা নেওয়া হবে।”
তাজুল ইসলাম নামে সিটি করপোরেশন স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তার গ্র্যাচুইটির পাওনা টাকার বিষয়ে জানালে এক সপ্তাহের মধ্যে তা পরিশোধের আশ্বাস দেন মেয়র।
শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী।
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন শুনানিতে।