তারা কেউ ছিলেন রিকশাচালক, কেউ ভ্যানচালক, আবার কেউ সবজি বিক্রেতা। একসময় এগুলোই ছিল তাদের পরিচিতি। এখন তারা পেশাদার গ্রিলকাটা চোর।
Published : 24 Jun 2018, 06:02 PM
বাড়তি আয় আর জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই রাতে দলবেঁধে চুরি করে তারা। কয়েক বছরে তারা দুই হাজারের বেশি চুরির ঘটনা ঘটালেও ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অবশ্য ষে রক্ষা হয়নি, পুলিশের জালে ধরা পড়েছে চক্রের পাঁচ সদস্য ও এক সোনা ব্যবসায়ী।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. বশির ওরফে বাচ্চু (৪৫), মো. জসীম উদ্দিন (৪২), মো. রুবেল (২৭), মো. জসীম (৩৫), ওসমান গণি (২৯) ও নারায়ণ বণিক (২৯)।
তাদের কাছ থেকে গ্রিল কাটার সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে।
সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন পেশাদার চোর। আর নারায়ণ বণিক তাদের কাছ থেকে চুরি করা সোনা কেনেন। আলকরণ এলাকায় ‘সোমা জুয়েলার্স’ নামের দোকান আছে তার।
গ্রেপ্তাররা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ লোকের মতো করে ঘোরাফেরা করে যেসব বাসায় কেউ নেই এবং তালা লাগানো সেসব বাসা শনাক্ত করেন। পরে রাতে সেসব বাসায় হানা দেন।
সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রেপ্তারদের সঙ্গে আজিজ নামে আরেকজনও আছেন। তারা রাতের বেলায় টার্গেট করা ঘরে গ্রিল কেটে ঢুকে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার বশর, পলাতক আজিজসহ অন্যরা যখন বাসায় চুরি করতে ঢোকে ওসমানসহ অন্যরা বাইরে পাহারায় থাকে। রাস্তায় পুলিশ বা ধরা পড়ে যাওয়ার কোনো শঙ্কা দেখলে ওসমান বাসার ভেতরে থাকা সঙ্গীদের মোবাইল ফোনে মিসড কল দিয়ে সতর্ক করে দেয়।
“তাদের কাছ থেকে চুরি করা স্বর্ণালংকার সোমা জুয়েলার্সের মালিক নারায়ণ বণিক কিনে নেন। সেগুলো গলিয়ে পরে তিনি হাজারী গলিতে বিক্রি করেন।”
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়ারা জানিয়েছে, কোনো কাজ না থাকলে নারায়ণ তাদেরকে হাত খরচের টাকা দেন। তাদের ভাষায় দৈনন্দিন এই ব্যয় ‘লাইন খরচ’।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার বশর আগে নগরীর ষোলশহর রেললাইনে সবজি বিক্রি করতেন। আর দুই জসীমের একজন চালাতেন রিকশা, অন্য জন ভ্যান। রুবেল ফেরি করে লুঙ্গি বিক্রি করতেন।
“গ্রেপ্তার বশর, রুবেল ও মো. জসীম জানিয়েছে আগে দৈনিক আয় করা টাকা দিয়ে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় জুয়া খেলতে গিয়ে তাদের পরিচয় হয়। পরে তারা আজিজসহ সবাই মিলে ব্রিজঘাট এলাকায় আড্ডা দিতেন এবং জুয়া খেলতেন।
“আর জসীম উদ্দিন জানিয়েছে আগে রিকশা চালালেও বশরের সবজি আনা নেওয়া করতে গিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাস দেড়েক আগে বশর তাকে ব্রিজঘাট এলাকায় নিয়ে যায় এবং অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।”
চক্রটি রোজার মাসেও বেশ কয়েকটি চুরি করেছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন।