চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু করে এই বর্ষার জন্য ‘ক্ষমা’ চেয়ে আগামী বছর দৃশ্যমান পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
Published : 28 Apr 2018, 01:28 PM
শনিবার সকালে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় চশমা খালের মাটি ও আর্বজনা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, “চট্টগ্রামবাসীকে হাত জোড় করে বলব- এবার যাতে বেশি প্রত্যাশা না করে। কারণ বিশাল কাজ। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি দ্রুত কাজ শুরুর জন্য।
“আমি বলব না, এবছরই পূর্ণ সফলতা আসবে। এটা হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যেটা সম্ভব না, সেটা বলা ঠিক না। কিন্তু কাজ যখন শুরু হয়ে গেছে, এ বছর না পেলেও চট্টগ্রামের মানুষ আগামী বছর দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখবে।”
বর্ষায় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রতি বছরই এই মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
ছালাম বলেন, “গত বর্ষায় নগরীর যেসব এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা ছিল, সেসমস্ত এলাকা চিহ্নিত করেছি। এবং পরিকল্পনার প্রথম অংশ হিসেবে সেই সমস্ত এলাকার ড্রেনগুলো আমরা পরিষ্কারের কাজে হাত দিয়েছি।”
কাজের জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “খাল তো দৃশ্যমান। কিন্তু ড্রেনের এত বেশি নেটওয়ার্ক যে ড্রেনের কোথাও ব্লক থাকলে- খালি পানি থাকবে না, কিন্তু রাস্তায় পানি থাকবে। এটা মাথায় রেখে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ড্রেনে হাত দিয়েছি। তারপর খালে চলে যাব।”
গত বছর নগরীর যে ৩০টি ওয়ার্ডের অভিজ্ঞতা ‘ভয়াবহ’ ছিল তা দূর করতে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর মধ্যে থাকবে- হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, চাক্তাই, বকশিরহাট, খাতুনগঞ্জ, দেওয়ান বাজার, চকবাজার, বৃহত্তর বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও শুলকবহর এলাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসন, ওয়াসা, ওয়াপদা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতাও চান আবদুচ ছালাম।
তিনি বলেন, “সকলে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সহযোগিতা করলে পরে অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম থেকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ চিরতরে মুছে যাবে।”
গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে দায়িত্ব পেলে নগরীর যে কোনো একটি এলাকায় জলাবদ্ধতার ‘দৃশ্যমান পরিবর্তন’ করবেন বলে দেওয়া বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করে মন্তব্য চান সংবাদকর্মীরা।
উত্তরে ছালাম বলেন, “আমি প্রতিশ্রুতিতে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। বাস্তবায়ন কতটুকু করতে পারছি সেই বিচারের ভার চট্টগ্রামবাসীকে দিয়ে দিলাম। কাজ শুরু হয়েছে।”
সিডিএ’র নেওয়া এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর।
ছালাম বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। চট্টগ্রামবাসীর কথা মাথায় রেখে সিডিএ দায়িত্বটা পুরোপুরি না নিয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়েছে।
“সংক্ষিপ্ত সময়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছি সেনাবাহিনীকে নিয়ে অন্তত কিছুটা এলাকা হলেও এই বর্ষায় যেন দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখাতে পারি।”
“মাটি উঠবে, ডাম্প ট্রাকে করে সাথে সাথে চলে যাবে। রাস্তার উপর, ড্রেনের পাশে কোনো ময়লা থাকবে না। গ্যারান্টি দিলাম।”
গত ৯ অগাস্ট ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই প্রকল্পের আওতায় খালের মাটি খনন, কাদা অপসারণ, নালা সংস্কার ও নির্মাণসহ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনের কাজও সিডিএ করবে।
এই প্রকল্পে শুরুতে ‘অসঙ্গতি’ থাকার কথা বললেও গত ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা স্মারক সাক্ষর অনুষ্ঠানে এসে বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নগরীর জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সমালোচনার মুখে ছিলেন মেয়র নাছির। তার আগের দুই মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মনজুর আলমও জলাবদ্ধতা ইস্যুতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।