ছুরিকাঘাতে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর পর তাণ্ডবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যত অচল ছিল চট্টগ্রাম নগরী।
Published : 29 Mar 2016, 10:04 PM
ভাংচুরের নিন্দায় মহিউদ্দিন; নাছিরের ভাষায়, ক্ষোভ
ছাত্র খুনের পর বিক্ষোভ, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসা মোড় ক্যাম্পাসে ছুরি মারা হয় এক শিক্ষার্থীকে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হলে বিকালে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটে স্থবির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আহ্বানে সন্ধ্যার পর বিক্ষুব্ধরা রাস্তা ছাড়লে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
এর আগে বিক্ষোভ-অবরোধের মুখে বিকালেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী নাছিম আহমেদ সোহেল (২৩) ছুরিকাহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর বেলা পৌনে ৩টার দিকে তাকে মৃত্যু হয়।
সোহেলের বাবা আবু তাহের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। বাড়ি কুমিল্লায় হলেও শের শাহ কলোনি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সোহেল।
সোহেল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন। সোহেলের ফেইসবুক পাতা থেকে জানা গেছে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির জানিয়েছেন, সোহেল ছাত্রলীগের নগর কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন।
ঘটনার শুরু, বিক্ষোভ
প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বাণিজ্য অনুষদের ২৩তম ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠান সকালে কয়েক দফা বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে দুপুরে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এক জুনিয়রকে মারধর করলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
সাঈদ, জয়নাল, নাজমুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জুনিয়রদের মারধর করেন বলে তারা জানিয়েছেন। সে সময় সোহেল তাদের বাধা দিতে গেলে তাকে ছুরি মারা হয়।
হামলাকারীরা বইয়ের ব্যাগে করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে বহিরাগতরাও ছিল বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
বিকালে সোহেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রবর্তক মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সামনে, আন্দরকিল্লা ও চেরাগী পাহাড় মোড়, আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর সড়ক অবরোধ করে।
প্রবর্তক মোড়ে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক উত্তম সেন গুপ্ত জানান, এসময় ছাত্রলীগের বেশকিছু সদস্য ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গাড়ি ও দোকানপাট ভাংচুর করে।
বিক্ষোভে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ছাত্রলীগকর্মীরা লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে অংশ নেয়। ফাটানো হয় কয়েকটি হাতবোমাও।
বিক্ষোভ পরে বহদ্দারহাট, ওয়াসার মোড়, গণি বেকারি, গোলপাহাড়, সিমেন্ট ক্রসিংসহ বিভিন্ন মোড়ে বিস্তৃত হয়। এসব স্থানে ছাত্রলীগকর্মীরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। চলে যানবাহন ভাংচুর ও হাতবোমার বিস্ফোরণও।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস এলাকায় কয়েকটি যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচে কয়েকটি দোকানের কাচ ভাংচুর করে।
আলোকচিত্র সাংবাদিক সুমন বাবু জানান, পুলিশ এক পর্যায়ে প্রবর্তক মোড় থেকে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দিলে কয়েকটি দোকানের কাচ ভাংচুর করে তারা; একপর্যায়ে সোহেলের লাশ মোড়ে এনে বিক্ষোভ দেখায়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক আহমদ জানান, প্রবর্তক মোড়ে দুই পক্ষ বিক্ষোভ করেছে।
সেখানে অবরোধের কারণে চকবাজার, গোল পাহাড় মোড়, জিইসি মোড় ও ওয়াসাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা দেয়।
নগরীর ওয়াসার মোড় থেকে প্রতিবেদক মোস্তফা ইউসুফ জানিয়েছেন, বিকাল ৪টার দিকে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে একটি পিকআপ ও রিকশা ভাংচুর করে।
সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মীরা সেখানে অবস্থান করায় আশপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
সন্ধ্যায় চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরী জানান, সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং দুটি হাতবোমা ফাটানো হয়।
এসময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাটিসোটা ও দেশি অস্ত্রও দেখা গেছে।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোহেলের লাশ দেখতে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির।
এসময় তিনি সাধারণ জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহবান জানানোর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রবর্তক মোড়ের অবরোধ ধীরে ধীরে উঠে যায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং ছাত্র নিহতের ঘটনাটি রাজনৈতিক নয় বলে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন জানিয়েছেন।
প্রবর্তক মোড় ক্যাম্পাসের বাইরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বলেও তিনি দাবি করেন।
দুপুরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইপক্ষের হাতাহাতির ঘটনার পর পুলিশ চারজনকে আটকের পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ।
এদিকে রাতে নগর ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফ দ্দিন টিটু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোহেল হত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।