আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য থানা পুলিশকে আদেশ দিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
Published : 16 Oct 2023, 05:49 PM
চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় চান্দগাঁও থানার চার পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছে তার পরিবার।
সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার এ আবেদন করেছেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী ও আইন সহায়তাকারী সংস্থা- ব্লাস্টের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য থানা পুলিশকে আদেশ দিয়ে পিবিআই’কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা এ মামলার আবেদনে চান্দগাঁও থানার ওসি মো. খায়রুল ইসলাম, শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা দুই এএসআই মো. ইউসুফ, সোহেল রানা ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুল হকের নাম রয়েছে।
এছাড়াও এস এম আসাদুজ্জামান, জসীম উদ্দিন, মো. লিটন, রনি আক্তার ওরফে তানিয়া ও কলি আক্তার নামে আরও পাঁচজনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রনি আক্তার তানিয়া যে মামলায় দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই মামলার বাদী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এস এম আসাদুজ্জামান, জসীম উদ্দিন, মো. লিটন ষড়যন্ত্র করে শহীদুল্লাহর জায়গা দখলের জন্য মিথ্যা মামলাটি করিয়েছেন। আর সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হারুনর রশিদ নিয়ম বর্হিভুতভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করিয়ে ‘অস্বাভাবিক দ্রততার’ সঙ্গে গ্রেপ্তার করে নাজেহাল ও শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করায় ভিকটিমের মৃত্যু হয়েছে।
“ঘটনার দিন দুই এএসআই ইউসুফ ও সোহেল রানা দুদক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে পরদিন আদালতে হাজির হওয়ার কথা জানান। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে এবং ওষুধ সেবন করতে না দিয়ে জোর করে টানাহেঁচড়া করে শহীদুল্লাহকে থানায় নিয়ে যান।”
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, দুই এএসআই এবং পরিদর্শক তদন্ত শহীদুল্লাহকে থানায় ওসির কক্ষে নিয়ে নানাভাবে হেনস্থা করে।
ঘটনার সময় ওসি নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন উল্লেখ করে আরও অভিযোগ করা হয়, শহীদুল্লাহ থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে থানায় যাওয়া আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দিয়ে দেয়। তখন স্বজনরা তাকে বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শহীদুল্লাহকে থানায় নেয়ার সময় কোনো পুলিশ সদস্য তাদের সাথে হাসপাতালে যাননি বলেও অভিযোগ করা হয় মামলার আবেদনে।
গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় বাসার কাছে রাস্তা থেকে একটি সিআর মামলায় দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মো. শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরে থানায় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।
রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় শহীদুল্লাহকে। ওই নারী নিজেকে ‘শহীদুল্লাহর বাসার গৃহকর্মী’ দাবি করেন। বেতনের ‘বকেয়া টাকা আনতে বাসায় যাওয়ায়’ গত ২৩ অগাস্ট রাতে তাকে শহীদুল্লাহ ও তাদের আত্মীয় কায়সার আনোয়ার ‘মারধর করেছিলেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
তবে রনি আক্তার তানিয়া নামে তাদের গৃহকর্মী ছিলেন না বলে দাবি করেছিলেন নিহতের ছেলে।
এ মামলায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২ অক্টোবর এএসআই ইউসুফ আলীকে পরোয়ানা তামিলের আদেশ জারি করা হয়।
শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর চান্দগাঁও থানার ওসি খায়রুল ইসলাম বলেছিলেন, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় শহীদুল্লাহকে হাজতে রাখা হয়নি, বসানো হয়েছিল ওসির কক্ষে। সে সময় অসুস্থ বোধ করেন শহীদুল্লাহ। পরিবারের সদস্যরাসহ শহীদুল্লাহকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়া দুদক কর্মকর্তা যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সে মামলায় তার বিরুদ্ধে জারি হওয়া সমন আদালত থেকে পাঠানো হয়নি বলেও অভিযোগ আছে। যার কারণে মো. শহীদুল্লাহ সমন জারির বিষয়টি জানতেই পারেননি।
সমন জারির পর নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই পরোয়ানাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং ওইদিন রাতেই তিনি মারা যান।
সমন না পাঠিয়ে আটকে রাখায় চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ হারুন উর রশিদকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ক্যাশিয়ার পদে বদলি করা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে শহীদুল্লাহ মৃত্যুর পরপরই চান্দগাঁও থানার দুই এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানাকে গত ৫ অক্টোবর থানা থেকে সংযুক্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু: আদালতের সমন পাঠানোই হয়নি শহীদুল্লাহকে
চট্টগ্রামে থানায় নেওয়ার পর সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু, ২ পুলিশ প্রত্যাহার