সমন না পাঠিয়ে আটকে রাখায় আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বদলি করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
Published : 10 Oct 2023, 12:24 AM
গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়া দুদক কর্মকর্তা যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সে মামলায় তার বিরুদ্ধে জারি হওয়া সমন আদালত থেকে পাঠানো হয়নি।
আদালত থেকে সমন না পাঠানোয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ সমন জারির বিষয়টি জানতেই পারেননি।
সমন জারির পর নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই পরোয়ানাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার দিনই তিনি মারা যান।
সমন না পাঠিয়ে আটকে রাখায় চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর জাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ হারুন উর রশিদকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ক্যাশিয়ার পদে বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল দেব সোমবার এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি মহানগর হাকিম মো. অলি উল্লাহকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক দুদক কর্মকর্তা এস এম শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি মামলায় আদালত সমন জারি করেছিল। কিন্তু সেই সমনটি না পাঠিয়ে আটকে রাখা হয়।
“প্রাথমিকভাবে বেঞ্চ সহকারীকে ক্যাশিয়ার পদে বদলির জন্য আজ আদেশ দিয়েছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। সমন আটকে রাখার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে আসলে কী ঘটেছিল।"
গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় বাসার কাছে রাস্তা থেকে একটি সিআর মামলায় দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মো. শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরে থানায় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।
ঘটনার পর চান্দগাঁও থানার ওসি খায়রুল ইসলাম বলেছিলেন, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় শহীদুল্লাহকে হাজতে রাখা হয়নি, বসানো হয়েছিল ওসির কক্ষে। সে সময় অসুস্থ বোধ করেন শহীদুল্লাহ। পরিবারের সদস্যরাসহ শহীদুল্লাহকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় শহীদুল্লাহকে। যিনি নিজেকে শহীদুল্লাহর বাসার গৃহকর্মী বলে দাবি করেছেন। বেতনের বকেয়া টাকা আনতে বাসায় যাওয়ায় গত ২৩ অগাস্ট রাতে তাকে শহীদুল্লাহ ও তাদের আত্মীয় কায়সার আনোয়ার ‘মারধর করেছিলেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
ওই মামলায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং ২ অক্টোবর থানা থেকে এএসআই ইউসুফ আলীকে পরোয়ানা তামিলের আদেশ জারি করে।
শহীদুল্লাহর ছেলে নাফিস শহীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে মামলায় আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না। রাতে বাসার কাছে রাস্তা থেকে সাদা পোশাকের দুই পুলিশ সদস্য তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।”
তার দাবি, তাদের বাসায় রনি আক্তার তানিয়া নামে কোনো গৃহকর্মী ছিলেন না। চাঁদা দাবি ও ভাংচুরের অভিযোগে স্থানীয় কিছু লোকের বিরুদ্ধে তার বাবা আগে একটি মামলা করেছিলেন। তাতে ‘প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে’ আসামিরা রনি আক্তার তানিয়া নামে ওই নারীকে দিয়ে ‘ভুয়া মামলা’ করিয়েছেন।
নাফিস শহীদ বলেন, থানায় তার বাবা অসুস্থ বোধ করলে পুলিশ বাইরে এসে জানতে চায় তার কোনো স্বজন সেখানে আছে কি না।
“এ সময় আমার চাচা থানায় প্রবেশ করে দেখেন, আমার বাবা টেবিলে মাথা নিচু করে আছে। তখন তাকে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়ায় পাওয়া যায়নি।”
সাবেক দুদক কর্মকর্তার ছেলের অভিযোগ, তার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে থানায় নিয়ে আসা দুই পুলিশ সদস্য ইউসুফ ও সোহেল রানার সাহায্য চাওয়া হলেও তারা এড়িয়ে গেছেন। বাধ্য হয়ে নিজেরাই বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে নিয়ে যান।
গত ৫ অক্টোবর দুই পুলিশ সদস্য এএসআই ইউসুফ আলী ও এটিএম সোহেল রানাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তারাই ৩ অক্টোবর শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়েছিলেন।
শহীদুল্লাহর ছেলে নাফিস শহীদ বলেন, তার বাবাকে পুলিশ ‘জোর করে টানা হ্যাচড়া করে’ নিয়ে যায় বলে কয়েকজন প্রতিবেশী তাদের জানান। ঘটনা শুনে তার চাচা ও ফুফাত ভাই চান্দগাঁও থানায় গেলে তখন তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
“আমার বাবা হৃদরোগী ছিলেন। আগে তার বাইপাস হয়েছিল। সেজন্য ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে হয়। আমার চাচা থানায় ওষুধ নিয়ে গেলেও তাকে সেগুলো আমার বাবার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি পুলিশ।”
চট্টগ্রামে থানায় নেওয়ার পর সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু, ২ পুলিশ প্রত্যাহার