ভুয়া সংসদের নেতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে।
Published : 18 Sep 2024, 03:28 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী তিন নির্বাচন কমিশন ও কমিশন সচিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে। এতে মোট ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আছেন।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরিফুল আলমের আদালতে আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম।
দায়িত্ব পালনকালে আসামিরা সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ্গ এবং নির্বাচনের নামে ‘প্রহসন করে’ দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত আমাদের আবেদনটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।”
আসামিরা হলেন- ২০১৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. জাবেদ আলী, মো. আবদুল মোবারক ও মো. শাহনেওয়াজ; ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ; ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিসুর রহমান ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এই তিন নির্বাচনের নির্দেশদাতা, ইন্ধনদাতা ও ভুয়া সংসদের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করার কথা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশপাশি এই তিন ‘ভোটারবিহীন প্রহসনের’ নির্বাচনের মাধ্যমে হওয়া ‘ভুয়া’ জাতীয় সংসদ সদস্য এবং এসব নির্বাচনে সহযোগিতাকারী ও অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তাদের তদন্ত সাপেক্ষে শনাক্ত করার পর তাদেরকেও এই মামলায় আসামি করার আবেদন করা হয়েছে। তবে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
জনগণের অংশগ্রহণ বিহীন প্রহসনের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন এবং সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ ভঙ করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সংসদ সদস্য ঘোষণা করায় দণ্ডবিধির ১২৪ (ক), ৪১৯, ৪২০, ৩৭ ও ১১৫ ধারায় এই মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বেআইনি তৎপরতা তথা জনগণের অংশগ্রহণবিহীন ভুয়া নির্বাচন ও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সংসদ সদস্য ঘোষণার কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদসহ সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে।
“যা সংবিধানের ৭(ক), (২) ও (৩) ধারার লঙ্ঘন। একারণে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত।”
বাদী একরামুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের মানুষ এই তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ৫-৭ শতাংশ ভোটকে ৪০ শতাংশ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এরকম নির্বাচন আয়োজন করে তারা সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ ও প্রতারণা করেছেন।
“এসব ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই কথিত সংসদ সদস্যরা যেসব বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ ভোগ করেছেন- তাও রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত নেয়ার আবেদন করা হয়েছে মামলায়।”