“ভারতকে মেসেজ দিতে চাই, ভারত যেন আমাদের সন্ত্রাসী প্রমাণ করতে না পারে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
Published : 29 Nov 2024, 08:41 PM
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের ‘বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার’ বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন অভিমুখে যাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ইসকনকে নিষিদ্ধ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের শেষ দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার বলেন, “আমাদেরকে সমস্যার গোড়া চিহ্নিত করতে হবে। যেহেতু ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, ভারত বাংলাদেশে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রামের ও কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে তাদের সাথে পরামর্শ করে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশের চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন অভিমুখে আমাদের লং মার্চ হবে ইনশাল্লাহ।
“উনাদেরকে বলে দিতে চাই, আমাদের সেই সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। এবং বাংলাদেশে কোনো হিন্দুর গায়ে আমাদের পক্ষ থেকে টোকাও পড়বে না। আমরা ভারতীয় মিশনে কোনো একটা পাটকেলও নিক্ষেপ করব না।”
সমাবেশে হারুন ইজহার বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ইনফরমেশন দিয়ে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা রয়েছেন এবং সমন্বয়কারী ছাত্র যারা রয়েছেন, সকলকে জানিয়ে দেব- ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করব। এবং শান্তিপূর্ণ দূরত্ব অবস্থানে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবে।
“সকাল ১১টায় যার যার অবস্থান থেকে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমবেত হবেন। সেদিন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে যাত্রা করব। ভারতকে মেসেজ দিতে চাই, ভারত যেন আমাদের সন্ত্রাসী প্রমাণ করতে না পারে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে সন্ধ্যায় মুফতি হারুন ইজহার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্মারকলিপি দেব। ভারতীয় মিডিয়া এবং তাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার করছে। সে বিষয়ে ভারত সরকারকে আমরা অবগত করতে চাই।
“দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মত কোনো কাজ যেন তাদের দেশের মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে না হয়। বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য যেন তারা বন্ধ করে। কূটনৈতিক মানদণ্ড যেন বজায় রাখে। ভারত সরকারকে সেটা অবহিত করতে চাই।”
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
‘তিন শর্তে হিন্দু সংগঠনের সাথে ডায়লগ’
দুপুরে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
মিছিলে সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়। মিছিলটি নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মুফতি হারুন ইজহার বলেন, “ইতোমধ্যে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল, সংগঠন এবং নেতৃবৃন্দের সাথে তারা বসতে চায়। স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এটি একটি চক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এদেশের বেশিরভাগ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, শুধু একটি দুটি সংগঠন ব্যতীত প্রায় সব সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে।
“ইতোমধ্যে তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন তাদের শাস্তির আওতায় আনল, তখন তারা নতুন বয়ান তৈরি করে। তাদের কিছু লোক বলতে লাগল- তোমরা সরকারের সাথে এবং আলেম ওলামাদের সঙ্গে তোমরা ডায়লগ কর।”
তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে ইসকন এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ সকল হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই- তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগামীতে হিন্দুত্ববাদী কোনো সংগঠনের সাথে আমরা আর আলাপে বসতে রাজি নাই।
“২০২০ সালে আমি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ইসকন নেতাদের সাথে ডায়ালগে বসেছিলাম, আপনাদের সকলের জানা আছে। এবং বিগত হাসিনা সরকার পতনের পরে আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে এবং তাদের আত্মরক্ষা ও সুরক্ষার জন্য সকল ব্যবস্থা করেছিল। এমনকি অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে, আমাদের কিছু ভাইয়েরা তাদের পূজা মণ্ডপেও গিয়েছিল, যেটা আমরা সমর্থন করি না। এত উদারতা দেখানোর পরও আমাদের ভাইকে জবাই করে তার উত্তর তারা দিল।”
মুফতি হারুন ইজহার বলেন, “এখন যদি কোনো হিন্দু সংগঠন ডায়ালগে বসতে চায়, একনম্বর শর্ত হল- এ সমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলোকে ভারতে সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই নম্বর শর্ত হল- বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যেসমস্ত ভুয়া প্রপাগান্ডা হয়েছে সেসবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
“তাদেরকে বলতে হবে- বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানদের পাশাপাশি অবস্থান করে, তারা নিরাপদ রয়েছে। এবং প্রথম আলোসহ বিভিন্ন ভারতীয় মিডিয়ায় যে প্রচার চালিয়েছে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে এ কথা মিথ্যা, এটা ভুয়া, এ কথা হিন্দু নেতাদেরকে বলতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমার তিন নম্বর শর্ত হল, আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মেরে থাকা যেসকল সন্ত্রাসী, গুণ্ডা ও জঙ্গিবাদী রয়েছে সবাইকে আপনাদের তত্ত্বাবধানে, আপনাদের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আওতায় তাদেরকে হস্তান্তর করতে হবে।
“এ তিনটি শর্ত পূরণ না হলে আমরা কোনো হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে ডায়লগে বসব না। এবং কোনো ইসলামী দল-সংগঠন যদি ডায়ালগে বসে, তারা মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।”
মুফতি হারুন ইজহার বলেন, “কেন আপনারা ইসকন ইসকন করছেন? শুধু ইসকন নয়, আরও সংগঠন রয়েছে। সনাতনী জাগরণী পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ- এগুলোও সমানভাবে ইসকনের মত সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন। এগুলোকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।
“আমাদের মূল লড়াই কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের সাথে নয়। এমনকি আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশের ইসকনসহ সনাতনী মহাজোট, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এদের সাথেও নয়। আমি গত দুইদিন আগেও ফেইসবুক স্ট্যাটাসেও বলেছি- সাপের লেজ চট্টগ্রামে-ঢাকা, সাপের মাথা দিল্লিতে। আমাদের লড়াই দিল্লির সাথে।”
তিনি বলেন, “হিন্দুস্তানের সামনে দুটো পথ রয়েছে। হয়ত হিন্দুস্তান তার অতীতের অবস্থানকে পরিবর্তন করে, আমাদের সাথে ডায়ালগে বসতে হবে এবং আগামী দিনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। হিন্দুস্তান যদি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিকে লেলিয়ে দিয়ে, তাদের কুকুরদেরকে বাংলাদেশে লেলিয়ে দিয়ে যদি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তাহলে আমরাও হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান অব্যাহত রাখব।”