প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৪০ লাখের বেশি বই প্রয়োজন।
Published : 01 Jan 2025, 04:33 PM
বছরের প্রথম দিন রাজধানীর মত চট্টগ্রামেও বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে ফিরেছে খালি হাতে। কোনো কোনো স্কুলে অল্প কয়েকটি বিষয়ের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তারা ‘বই তুলে দিতে পারবেন’।
নগরীর সরকারি কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বুধবার কোনো শ্রেণির বই বিতরণ করা হয়নি। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বছরের প্রথম দিন ‘কোনো বই এসে পৌঁছায়নি’ বলে জানিয়েছেন স্কুলের অধ্যক্ষ রেহেনা আক্তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামীকাল আমরা কিছু বই পাব। সেগুলো বিতরণ করা হবে।“
এদিকে নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই বিতরণ করা হলেও অন্যান্য শ্রেণির বই দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান।
“অন্যান্য শ্রেণির বইগুলো ধাপে ধাপে দেওয়া হবে।“
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী জানিয়েছেন, তার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাতটি বিষয়ের মোট ২০০টি এবং দশম শ্রেণিতে তিনটি বিষয়ের ৩১০টি বই তারা পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, এবতেদায়ি, দাখিল, ভোকেশনাল ও সাধরণ শিক্ষা মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় এক কোটি ৭৪ লাখ ৪৪ হাজার বইয়ের চাহিদা আছে। যেগুলোর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা মাত্র তিন শতাংশ শতাংশ বই পেয়েছেন।
যেসব বই পাওয়া গেছে সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
উত্তম খীসা বলেন, “ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ের মধ্যে সাত বিষয়ের বই পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো শুধু মহানগরের কোতোয়ালী ও পাঁচলাইশ থানায় এসেছে। অন্য থানা ও উপজেলাগুলোতে আসেনি। আবার কিছু কিছু উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এবং মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণির বাংলা, অংক ও ইংরেজি বই এসেছে।“
এ বছর ক্যারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে ১০ম শ্রেণিতে নতুন করে বই দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তম খীসা।
সীতাকুণ্ডের স্কুলগুলোয় ১০ম শ্রেণির তিন বিষয়ের বই এসেছে। তবে তা অন্য উপজেলায় আসেনি।
উত্তম খীসা বলেন, “চট্টগ্রামে বই ছাপানোর দায়িত্ব পাওয়া সাতটা প্রেসে আমি গতকাল গিয়েছিলাম। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তারা সব বই আমাদের সরবরাহ করতে পারবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে, যা দেখা গেছে ফেলে আসা বছরেও।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই চক্র ভেঙেছে, এবার স্কুলগুলোতে সেই আয়োজন নেই। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে সব নয়, কোনো কোনো বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুক তুলে দিতে পেরেছেন শিক্ষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগেই জানিয়েছিল বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও এক এক স্কুলে এক এক শ্রেণিতে বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বই বিতরণ হয়নি বেশির ভাগ স্কুলে।
এর মধ্যে বইয়ের পিডিএফ কপি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর https://nctb.gov.bd/ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই দিতে না পারায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী প্রাণহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাজাহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্কুলে প্রাক প্রাথমিক এবং প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়েছে।
তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই স্কুলে না পৌঁছানোর কারণে বিতরণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
আর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বিষয়ের বই বিতরণ করা হলেও প্রাক প্রাথমিকের কোন বই পৌঁছায়নি ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি খান সাহেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক লিপি মহাজন জানিয়েছেন, যে কারণে প্রাক প্রাথমিকের বই বিতরণ করা হয়নি তার স্কুলে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান জানান, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৪০ লাখের বেশি বই প্রয়োজন। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮ শতাংশ বই তারা হাতে পেয়েছেন।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বেশির ভাগ বই আসলেও চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই আসেনি বলে জানিয়েছে তিনি।
তবে সবগুলো বই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা আশা করছেন শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানের।