যখন থানাগুলো আক্রান্ত হয় তখন কেউই বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি। ভাংচুর অগ্নিসংযোগের পর সেগুলোতে লুটপাট করা হয়েছে।
Published : 06 Aug 2024, 06:41 PM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের মত চট্টগ্রামেও হামলা-লুটপাটে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে কয়েকটি থানা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখা গেছে এসব ধ্বংসস্তুপের সামনে মানুষের জটলা।
সকাল ১১টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানায় গিয়ে দেখা যায় গেইট লাগানো। বাইরে মানুষের জটলা। ১০/১২ বছর বয়েসী কিছু শিশু ও যুবক ভেতরে ভেতরে লোহা খুঁজছে।
গেইটের ভেতরে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া একটি সাঁজোয়া যান, কয়েকটি পিকআপ, মোটর সাইকেল, ভাঙ্গা বেশ কয়েকটি গাড়ি। তিন তলা ভবনের প্রত্যেকটি জানালার কাচ ভাঙ্গা। পুরো থানা ভবনে পোড়া চিহ্ন।
কোতোয়ালী থানা থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে সদরঘাট থানা। সেখানেও গেইটে পড়ে আছে কিছু ভাঙ্গা মোটর সাইকেল।
থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করা না হলেও সেখানে ভাঙচুর করা হয়েছে। থানার বাইরে খোলা স্থানে পড়ে আছে পোড়া তিনটি পিকআপ ভ্যান, মোটর সাইকেল, ভাংচুর করা অটোরিকশা।
থানার গেইটে সড়কের উপর ভাঙ্গা মোটর সাইকেলগুলো ঘিরে ছিলেন কিছু যুবক।
তাদের ভাষ্য, এসব মোটর সাইকেল ডাম্পিং স্টেশন থেকে লুট করা হয়েছিল। সেগুলো তারা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছের ফেরত দেওয়ার জন্য।
থানার বিপরীতে নগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ডাম্পিং স্টেশন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও ডাম্পিং স্টেশনের সামনের সড়কে পোড়া ছাই থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ডাম্পিং স্টেশনের খোলা মাঠে ভাঙ্গাচোরা কয়েকটি বাস, মিনি ট্রাক থাকলেও মাঠ খালি।
সেখানে থাকা কিছু লোকের ভাষ্য, ডাম্পিং স্টেশনে সোমবারও অনেক মোটর সাইকেল ছিল। সেগুলো লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউই তাদের বাধা দেয়নি।
এসময় ছবি তুলতে গেলে তিন যুবক বাধা দেন।
ডবলমুরিং থানায় গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে অনেক লোকের সমাগম। কয়েকজনের হাতে দেখা গেছে লাঠি। ভেতরে ভাঙ্গা গাড়ি, থানা কম্পাউন্ডের ভেতর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, থানা ভবন সবকিছুই ভাঙ্গা। আগুনে পোড়া কয়েকটি গাড়ি ও মোটর সাইকেল পড়ে আছে থানার কম্পাউন্ডে।
ভেতরে থাকা লোকজনকে বিভিন্ন মালামাল খুঁজতেও দেখা গেছে। সেখানেও ছবি তোলা যায়নি।
কোতোয়ালী থানার মত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে পাহাড়তলী থানা।
পাহাড়তলী থানার সামনে খালি জায়গায় পড়ে আছে পুলিশের প্রোটেকশন গার্ড, জুতা। থানার ভেতরে থাকা কয়েক পিকআপ ভ্যান পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। ছয় তলা ভবনের প্রত্যেক তলার জানালার কাচ ভাঙ্গা। ভবনে আগুনের ক্ষত।
থানার ভেতরে বিভিন্ন বয়েসী লোকজনের দেখা পাওয়া যায়। তাদের বলতে শোনা গেছে কিছু নাই। শুধু কিছু কাগজ পাওয়া যাচ্ছে।
সেখানে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ছবি তুলতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তিনি।
নগরীর আকবর শাহ থানায়ও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। থানার সামনে খালী জায়গায় পড়ে আছে একটি পোড়া পিকাপ, কার, মাইক্রো, পিকাপ, মিনি ট্রাক।
বিভিন্ন থানা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা যায়, যখন থানাগুলো আক্রমণ হচ্ছিল তখন কেউই বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর সেগুলোতে লুটপাট চালানো হয়েছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘোষণার খবর আসার পরপরই চট্টগ্রামে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে তারা বিজয় মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকে।
সেসব মিছিল থেকে হামলা হয় নগরীর কোতোয়ালী, সদরঘাট, ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, পতেঙ্গা থানায়। এসব থানায় অগ্নিসংযোগ করা হলেও কিছু থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য জানা যায়নি।