‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসার সময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেখিয়েছিল ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত। ঘণ্টায় দুইশ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তির এই ঝড় নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ঝড়ের ঝাপটা চট্টগ্রামে খুব একটা লাগেনি।
মোখার তেমন কোনো প্রভাব বন্দরনগরীতে পড়েনি। সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, বৃষ্টি হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রোববার দুপুর পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
শনিবার রাত থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়, সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কমে কিছুটা।
রোববারের সকালের দিকেই নগরের বাসিন্দারা বুঝতে শুরু করেন, এ ঝড় নিয়ে যতটা ভয় তৈরি হয়েছিল, তা ততটা ক্ষতির কারণ হচ্ছে না।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক ওবায়েদ উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ কক্সবাজার মিয়ানমার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠেছে। তাই চট্টগ্রামে ঝড়ের তেমন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।
“তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। টেকনাফ উপকূলে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ঝড়ের প্রভাবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।”
চট্টগ্রামে সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “তখন দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।”
ঝড়ের কারণে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়ার পর শনিবার থেকে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও নগরী মিলিয়ে ৮৯ হাজার ৬৫ জন শনিবার রাতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নেন।
এরমধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ১১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৮৮৫ জন, আনোয়ারা উপজেলায় ৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৮০ জন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৬২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ২৮৯ জন, কর্ণফুলী উপজেলায় ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২০০ জন এবং মিরসরাইয়ে ৬০ জন আশ্রয় কেন্দ্রে যান।
এছাড়া নগরীর ৯৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয় ৬ হাজার মানুষকে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আছেন, তারা আপাতত সেখানেই থাকবেন।
“বিকেলের দিকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাদের বিষয়ে। বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আজ দুপুর পর্যন্ত মতিঝর্ণার পাহাড়গুলো থেকে শতাধিক পরিবারকে সরানো হয়েছে।”
দুর্ভোগের কারণ ‘গ্যাস’
ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রামে সরাসরি বিপদ ঘটাতে না পারলেও এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের কারণ ঘটিয়েছে।
মোখার আঘাতের আশঙ্কায় শুক্রবার রাতে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ যাওয়ায় বেড়ে যায় লোডশেডিং। বাসা বাড়িতে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় রান্না। জ্বালানির অভাবে অলস বসে থাকে রয়েছে যানবাহন। যেগুলো চলছে, সেগুলোতে ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
সকালে উঠেই নগরবাসী নাস্তার খোঁজে হোটেল-রেঁস্তোরায় ভিড় করে। রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রিপন নন্দী তাদের একজন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সকালে উঠেই দেখি চুলায় গ্যাস নেই। খাবারের খোঁজে হোটেলে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন।
“মোখা চট্টগ্রাম শহরে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। শুধু গ্যাস বন্ধ হওয়ায় শহরের মানুষ খাবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গেছে।”
ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নগরীর সব সড়কই ছিল ফাঁকা। গাড়ি বলতে রিকশা, রিকশাভ্যান, সাইকেল, অল্প কিছু মোটর সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে চলাচল করছে। বাসের সংখ্যাও ছিল কম।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে ৬/৭ দিন সময় লাগতে পারে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মূলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে আসা গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়। ঘূর্নিঝড়ের কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাসাবাড়ি ও ফিলিং স্টেশনগুলোতে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।