সমিতির সভাপতি বলেন, “এ মামলা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে শৈথিল্যভাব আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।”
Published : 01 Jan 2025, 07:44 PM
আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার তদন্তে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে অভিযোগ করে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম আদালত এলাকার আইনজীবী এনেক্স ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রামের আইনজীবীরা গভীরভাবে শোকাহত। সেদিন চিন্ময় কৃষ্ণকে আদালতে তোলার পর থেকেই ইসকন সমর্থকরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছিল। ১৩১ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রাম আদালতে এ ধরনের ঘটনা হয়নি।
“ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা জড়িত, যারা ইন্ধন দিয়েছে, পরোক্ষভাবে সহায়তা দিয়েছে প্রতিটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানাই।”
আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে চিন্ময় দাশের উসকানি ছিল দাবি করে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “কারণ প্রিজন ভ্যানে চিন্ময় দাশ উঠার পরে পুলিশের মাইকে বক্তব্য দিয়ে সমর্থকদের উসকানি দিয়েছে। তার কারণে পর্যায়ক্রমে অনেক ঘটনা হয়েছে।
“আমরা দাবি জানাই, আলিফ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক।”
নাজিম উদ্দিন বলেন, “আলিফ হত্যা মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সফলতা আমরা দেখেছি। কিন্তু হত্যা মামলা এখন ধীরগতিতে চলছে। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রশাসন, পুলিশ ও সংস্থার লোকদের অনুরোধ জানাই, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মামলা তদন্ত করবেন।
“যারা হত্যার সাথে জড়িত তাদেরকে এই মামলায় অভিযুক্ত করবেন। যদি এ মামলা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে শৈথিল্যভাব আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। যদি স্বাভাবিকভাবে তদন্ত শেষ না হয়। আন্দোলন করে আমাদের প্রিয় ভাইয়ের হত্যা মামলার তদন্ত নিশ্চিত করার আন্দোলনে আমরা রাজপথে থাকব। পুলিশ প্রশাসন যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন আশা করি।”
সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, “সরকারকে বার্তা দিতে চাই যে, দিনেদুপুরে পরিকল্পিতভাবে আইনজীবী আলিফকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই বলে এ সরলতাকে দুর্বলতা ভাবনার সুযোগ নেই।”
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুস ছাত্তার বলেন, “রহস্যজনকভাবে পুলিশের সামনে সেদিন মিছিল করেছে ইসকন সমর্থকরা। পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে চিন্ময় বক্তব্য দিয়েছে। এসব তদন্তে আসতে হবে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে হত্যা মামলার তদন্ত হবে না।
“এসব দিয়ে আইওয়াশ করতে আসবেন না, আমরা আইন জানি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ ঘটনায় যারা নেপথ্যে রয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
সমাবেশে আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে শেষে একটি মিছিল আদালত এলাকা প্রদক্ষিণ করেন।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশের জামিন শুনানির দিন ধার্য আছে।
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫/১৬ জনকে আসামি করা হয়।
আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন আলিফের ভাই খানে আলম, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর বাইরে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। ওই তিন মামলায় মোট ৭৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ১ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় সবশেষ ৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২৯ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।