কেবল লক্ষ্মীপুরেই ক্ষতি হয়েছে ১২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।
Published : 23 Nov 2023, 10:40 PM
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২০০ কোটির টাকার বেশি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন ফসলের, টাকার অংকে যার পরিমাণ ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে ৮২ কোটির টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করা এ প্রতিবেদন সোমবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাং নাছির উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের অধিভুক্ত পাঁচটি জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রান্তিক পর্যায় থেকে তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা বা প্রণোদনার বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট বাতাস ও ঝড়-বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতকালীন সবজির। ১ হাজার ৪৬০ দশমিক ৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার।
এছাড়া ৬ হাজার ৪৩২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮২ কোটি টাকার কিছু বেশি।
তার বাইরে ৪ হাজার ২৪ হেক্টর জমির খেসারি ডাল নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। ১২৫ হেক্টরের বেশি জমির সরিষা নষ্ট হয়ে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি বোরো ধানের বীজতলা, পান, মসুর ডালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপ-পরিচালক নাছির উদ্দীন জানান, এ ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের আর চট্টগ্রামে হয়েছে শীতকালীন সবজির। তবে অন্যান্য জেলাগুলোতেও কমবেশি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
“এটি আমন ধান কাটার মৌসুম। বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু হয়েছে, অনেক স্থানে আবার কাটাও শেষ হয়েছে। যে ধানগুলো নষ্ট হয়েছে, সেগুলো পাকা ধান। তবে সার্বিকভাবে ধানের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেশি নয়।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ ঘূর্ণিঝড়ে সব ধরনের ফসল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলায়। এ জেলায় ৬ হাজার ২৯ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ১২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।
জেলাটিতে ৫ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকার। আর ৮৭৫ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার।
পাশাপাশি জেলাটিতে খেসারি, সরিষা, সয়াবিন, মসুর ডাল ও বোরো ধানের তৈরি করা বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রায়পুর উপজেলায়। এরপর বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর ও রামগতি উপজেলায়।
রায়পুরে ৪৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে; যার মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার আমন ধান ও ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকার শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে।
এ উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও সরিষায় ‘শতভাগ’ ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সদর উপজেলায় ৪২০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে ২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার এবং ৯১৮ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ছে।
রামগতি উপজেলায় ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার আমন ধান ও তিন কোটি ৪৩ লাখ টাকার শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতির নিরিখে লক্ষ্মীপুরের পরেই নোয়াখালীর অবস্থান। এ জেলায় ৫ হাজার ৬৯৮ দশমিক ৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকার।
যার মধ্যে ১ হাজার ২৩৬ দশমিক ৭ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর ৪ হাজার ১৪ দশমিক ৩ হেক্টর জমির খেসারি ডালের ফলন নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি।
এছাড়া ৩৩৫ দশমিক ৬৫ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার।
ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। ২০৮ দশমিক ৩ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। আর আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে ৪২ লাখ ৩৩ হাজার টাকার।
কক্সবাজারে প্রায় ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ফেনীতে প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কক্সবাজারে আমন ধানের কোনো ক্ষতি না হলেও ২৯ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার। এছাড়া এ জেলায় পান ও সরিষার ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেনীতে ৪২ লাখ টাকার আমন ধান এবং সাড়ে ৭৬ লাখ টাকার শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’: চট্টগ্রামে ফসলের ‘বড় ক্ষতি নেই’
গত ১৭ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। পরের দুই ঘণ্টায় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে দুর্বল হয়ে বেলা ৩টার দিকে তা পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে।
ঝড়ের আগের রাতে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফে বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপায় এক পরিবারের চারজন নিহত হন। ঝড়ের মধ্যে গাছের ঢাল ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাইয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়।
ঘরের উপর গাছ পড়ে সেদিন দুইজনের প্রাণ যায় কুমিল্লার লালমাইয়ে। এছাড়া টাঙ্গাইলের বাসাইলে এক ব্যবসায়ীর প্রাণ কাড়ে গাছের ভাঙা ডাল।