পরিবেশবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী এমনিতেই মৃতপ্রায়। এবার পোড়া চিনির বর্জ্যে নদীর ‘সর্বনাশ’ হয়েছে।
Published : 07 Mar 2024, 11:35 PM
টানা তিন দিন এস আলমের চিনি পোড়া তরল বর্জ্য নদীতে পড়ায় মরছে কর্ণফুলীর মাছ; পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে কয়েক কিলোমিটার।
পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী এমনিতেই মৃতপ্রায়। এবার পোড়া চিনির বর্জ্যে নদীর ‘সর্বনাশ’ হয়েছে।
তাদের আশঙ্কা, দীর্ঘমেয়াদে নদীর জীব বৈচিত্র্য এবং নদী তীরের উদ্ভিদ মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। আর কর্ণফুলীর দূষণের প্রভাব হালদা নদীতে পড়লে বিপন্ন হবে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র।
সব মিলিয়ে শিল্প দুর্ঘটনার এই প্রভাব পরিবেশে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার আগুন লাগার পর মঙ্গলবার থেকেই নদীতে মিশতে শুরু করে পোড়া চিনির বর্জ্য। বৃহস্পতিবার শেষবেলায় সেসব বর্জ্য নদীতে পড়া ঠেকাতে মাঠে নামে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্জ্য নদীতে মেশা ঠেকাতে বাধ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয় এস আলম গ্রুপের সেই চিনি কলকে। আর নদীর দূষণ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি ও দায় ও ক্ষতি নির্ধারণে কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
নদীর দক্ষিণ পাড়ে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে এস আলম সুগার রিফাইনারি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা। এই চিনি পরিশোধনাগারে দিনে ২২০০ টন চিনি পরিশোধন করার সক্ষমতা আছে।
কারখানার সীমানার মধ্যেই পাঁচটি গুদাম। যার একটিতে পরিশোধিত চিনি এবং বাকি চারটি গুদামে অপরিশোধিত চিনি রাখা হয়।
সোমবার বিকাল ৪টার দিকে যখন ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে তখন সেটিতে ১ লাখ টনসহ চারটি গুদামে মোট চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা।
সোমবার বিকেল থেকে রাতভর চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও পুরোপুরি নির্বাপন করা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে এসে সে আগুন অনেকটা নির্বাপন হয়।
এর আগে মঙ্গলবার ওই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, চিনি পোড়া তরল লালচে কালো বর্জ্য নালা হয়ে অদূরের কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে নদীর দুই তীরে মাছ ভাসতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন নদীর পাড়ের মানুষ।
এরপর বুধবার সারাদিনও নদীর দুই পাড়ে মাছ ভাসতে দেখা যায়। লোকজন নদীর উত্তর পাড়ে ফিশারিঘাট ও ব্রিজঘাট এলাকায় এবং দক্ষিণ পাড়ে চর পাথরঘাটার বাংলাবাজার অংশে খালি হাতে মাছ ধরতে নেমে পড়ে।
স্থানীয়রা খালি হাত, টানা জাল ও নেট দিয়ে চিংড়ি, গুলশা, টেংরা, কাঁকড়া, বাইন মাছসহ বিভিন্ন মাছ ধরতে শুরু করে।
নদীর তীরের কাছে এসব মাছ ভাসতে এবং তীরের কাদায় এসব মাছ আটকে থাকতে দেখা গেছে। এরমধ্যে দক্ষিণ পাড়ে বাংলাবাজার খাল ও ঘাট সংলগ্ন অংশে নদীর পানি ঘোলাটে বাদামি রঙের হয়ে আছে। নদীর ওই অংশ এস আলমের চিনি কারখানার কাছেই।
বুধবার এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বুধবার বিকাল থেকে চিনি কলের দেয়াল দিয়ে অন্তত ১০টি স্থানে পোড়া চিনির বর্জ্য নালায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় নালা ও সড়কের উপর দিয়ে বর্জ্য বয়ে চলতে থাকে এলাকার খালে। খাল হয়ে সেসব বর্জ্য আবার কর্ণফুলীতে গিয়েই পড়ছিল।
বৃহস্পতিবার নদীর কারখানা সংলগ্ন এ অংশের দুই দিকেই প্রায় তিন চার কিলোমিটার জুড়ে পানির রঙ ছিল কালচে বাদামি। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানির উপরিভাগে মরে ভেসে উঠে। লোকজন খালি হাতেই সে মাছ ধরছিল।
মরেছে ১১ প্রজাতির মাছ
বুধ ও বৃহস্পতিবার নদী থেকে মৃত মাছের নমুনা সংগ্রহ করেছে মৎস্য বিভাগ।
চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আজও মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখেছি। নদীতে বর্জ্য পড়া যতক্ষণ বন্ধ করা যাবে না ততক্ষণ মাছ মরা ঠেকানো যাবে না।
"দুই দিনে কী পরিমাণ মাছ ও জলজ প্রাণী মরেছে সেটার পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি৷ সবচেয়ে বেশি মরেছে চিংড়ি ও গুলশা। এখন পর্যন্ত আমরা ১১টি প্রজাতি শনাক্ত করেছি।"
এগুলো হলো- চিংড়ি, টেংরা, লাল চেউয়া, কুকুরজিভ, ছটা বেলে, লেজে পোয়া, বস্তা পোয়া, দেশি বেলে, দাঁতিনা কোরালের বাচ্চা, টেক চান্দা এবং কাঁকড়া।
প্রথমদিন গুলশা, চিংড়ি ও কাঁকড়া পাওয়া গিয়েছিল বেশি। বৃহস্পতিবার ছোট আইড়, রিটা, পোয়া ও বেলে মাছ পওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয়রা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, "এত বড় নদীতে বর্জ্য পড়া থামানো না গেলে মাছ মরা থামবে না। জোয়ার ভাটার নদী বলে যদি বর্জ্য পড়া বন্ধ হয় তাহলে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে মাছ বাঁচতে পারত।"
নদীর মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা পরিবেশ অধিদপ্তরের এখতিয়ার।"
অবস্থান কর্মসূচি
এস আলমের চিনির কারখানা থেকে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে কর্ণফুলী দূষণের প্রতিবাদে কর্ণফুলী রক্ষায় 'জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চ' এর উদ্যোগে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয় বৃহস্পতিবার।
এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, আরএসকে ফাউন্ডেশন ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।
শনিবারের মধ্যে কী পরিমাণ তরল রাসায়নিক বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়েছে তা নির্ণয় করে এস আলম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রোববার বেলা ১১টায় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় কর্মসূচি থেকে।
অবস্থান চলাকালে জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, "এভাবে নদী ধ্বংস হচ্ছে আর প্রশাসন চুপ করে দেখছে। আমরা এর কঠিন জবাব দেব।
"আজ কর্ণফুলী নদীর ওপারে ইছানগর বাংলা বাজার ঘাটে গিয়েছিলাম সকাল ১১টায়। এস আলম গ্রুপের চিনির গোডাউন থেকে তখনো আগুনে পোড়া বর্জ্য তীব্র বেগে এসে কর্ণফুলীতে পড়ছিল। একেবারে কোকাকোলার মত পানি। এস আলম, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের হুঁশ কবে হবে?"
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “এটা ছিল গলদা চিংড়ি, ট্যাংরার ডিম পারার সময়। সব মাছই এখন শেষ। কর্ণফুলীর পানি পানযোগ্য নয়। বলা যায় কর্ণফুলী এখন শেষ। একে আবার ঠিক করতে হবে। ঠিক করতে পারে জনগণ।
"চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলনে নামা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তীব্র আন্দোলনই পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জাগিয়ে তুলতে। আসুন আন্দোলনের পথ ধরি– কর্ণফুলীকে রক্ষা করি।"
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, "আমাদের জন প্রতিনিধিদের নির্লিপ্ততার কারণে এভাবে কর্ণফুলীকে হত্যা করার সাহস করছে এস আলম কর্তৃপক্ষ। এক লক্ষ টন চিনি তৈরির রাসায়নিক কেমিকেল থেকে সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলীতে ফেলার কারণে ইতোমধ্যে নদীর ষোল কিলোমিটার এলাকায় জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
"দেশীয় প্রজাতির সকল মাছ মরে গেছে। এমনকি কাদার মধ্যে অবস্থানকারী কুইচ্চ্যা মরে ভাসতে দেখা গেছে। যা কর্ণফুলীকে হত্যার শামিল। ইতোপূর্বে কর্ণফুলী নদীতে এই ধরনের রাসায়নিক পড়েনি।"
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সঞ্চালনায় এস এম পেয়ার আলীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সমন্বয়ক মনিরা পারভিন রুবা, তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সিঞ্চন ভৌমিক, আরকেএস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী জাহেদুল করিম বাপ্পী, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক নুরুল হুদা চৌধুরী, সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ লোকমান, চরপাথরঘাটা সাম্পান মাঝি সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন আবুল।
দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির শঙ্কা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনঞ্জুরুল কিবরিয়া গত দুদিন ধরে কর্ণফুলীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "কর্ণফুলী নদীর আজকের পরিস্থিতি গতকালের চেয়ে খারাপ। দূষণের ভয়াবহতা আরো ছড়িয়ে পড়ছে।
"আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, যদি চিনি আগুনে পোড়ানোর ফলে নতুন কোন ক্ষতিকর কেমিকেলে পরিবর্তিত হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে।”
কর্ণফুলী জোয়ার ভাটার নদী হওয়ায় ধীরে ধীরে দূষণের প্রভাব প্রাকৃতিক উপায়ে কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, "তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগবে। দূষক পদার্থসমূহ জোয়ার ভাটার মাধ্যমে প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত মাছ এবং অন্যান্য জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
হালদা নদীতেও যে প্রভাব পড়তে পারে, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপক মনঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, "জোয়ারের পানি যদি হালদা পর্যন্ত যায়, অবশ্যই হালদা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে এখন অমাবস্যা-পূর্ণিমা না, যদি অমাবস্যা বা পূর্ণিমা হত, তাহলে হালদার গভীরে পানি প্রবেশ করত।”
বিপদে নদী তীরের উদ্ভিদও
২০২২ সালে বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা ইকো কর্ণফুলীর তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৮১ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ শনাক্ত করেছিল।
ওই সমীক্ষা পরিচালনাকারী দলের সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কর্ণফুলী নদীতে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি মিশ্রিত হওয়ার কারণে পানির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়েছে।
"উত্তপ্ত চিনি মিশ্রিত বর্জ্যের কারণে আশপাশের উদ্ভিদ অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মারা যাবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে মাটিতে অতিরিক্ত চিনির কারণে উদ্ভিদের শিকড় থেকে উল্টো পানি বের হয়ে যাবে মাটিতে। এতে করে পানি স্বল্পতায় উদ্ভিদ মারা যাবে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।"
নদীর পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাছ এবং জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক রাসেল বলেন, "যা নদীর ও সামুদ্রিক মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি।
"গভীর শঙ্কা হল, চিনির কাঁচা রাসায়নিকের পোড়া গলিত বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়ায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। এমনকি এর প্রভাব একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর উপরও প্রভাব পড়বে। কেননা কর্ণফুলীর সাথে হলদার একটি মোহনা আছে। জোয়ারের পানির সাথে দূষিত পানি যদি হালদায় প্রবেশ করে কার্প জাতীয় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
কি করছে প্রশাসন
বৃহস্পতিবার এস আলমের চিনি কল, নদীতে বর্জ্য পড়া এবং আশেপাশের এলাকায় নালা খালে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া পরিদর্শন করতে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, "উনাদের প্রতি আমরা একটা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা মানে– পরিবেশ অধিদপ্তর, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বিএসটিআইসহ আরও সংস্থা মিলে।
"নির্দেশনাটা হচ্ছে- এখানে কারখানা থেকে চিনির যে লাভাটা নদীতে গিয়ে পড়ছে, সেটা যেন আর না পড়ে। এটা আমরা আর কোনোভাবে অ্যালাও করব না। কারখানার পাশেই প্রচুর জায়গা আছে। এখানে গভীর গর্ত করে বর্জ্যগুলো স্টোর করে রাখতে হবে।"
জানতে চাইলে রাতে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আগুন পানিটা নদীতে গিয়ে সরাসরি পড়ছে। এর সঙ্গে র-সুগার মিক্স আছে। সেটা আবার আগুনে গলে লাভায় পরিণত হয়েছে। সেই পানিটা নদীতে পড়ার কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে।
"আমাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে আর নদীতে চিনি পোড়া অবশেষ ফেলা না হয়। তারা বাধ দিয়ে সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা এখনো সেখানে আছি।"
তিনি বলেন, "অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের নির্দেশে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা নদী দূষণের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও করণীয় ঠিক করবে।"
নদী দূষণের দায়ে এস আলম সুগার রিফাইনারি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, "আগে তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষ করবে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপ-পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, "দুর্ঘটনার পর আমরা তিনটা স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। নদীর বাংলাবাজার ঘাট, সুগার মিলের ভেতরের ড্রেন এবং পূর্ব পাশের ড্রেন থেকে এসব নমুনা নেওয়া হয়েছে।
"প্রাথমিক পরীক্ষায় তিন জায়গার নমুনা পানিতে পিএইচ এবং ডিও কমে গেছে। কয়েকদিন পর আরো বিস্তারিত প্রতিবেদন পাব।"