“কর্মসূচির বিষয়টি তো আগে থেকেই ঘোষণা ছিল, তারপরও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেষ মুহূর্তে তারা যাত্রা বাতিল করেছে,” বলেন ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একজন।
Published : 28 Jan 2025, 09:57 PM
চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার, লোকাল ও পণ্য পরিবহন মিলিয়ে প্রতিদিন ৪০টিরও বেশি ট্রেন চলাচল করলেও রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার কোনো ট্রেন চলাচল করেনি।
ফলে স্টেশনে গিয়ে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। উপায় না পেয়ে তাদের কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা বিআরটিসির বাসেই গন্তব্যে ছোটেন। নগরীর বিআরটিসির মোড় থেকে ট্রেনের যাত্রীরা টিকেট দেখিয়ে সেসব বাসে ওঠেন।
মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে গিয়ে বিপাকে পড়েন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রী আরিফ হোসেন। কর্মসূচির আগেই ঘোষণা হলেও রেল কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেয়নি সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই যাত্রী বলেন, “রানিং স্টাফদের কর্মসূচির বিষয়টি তো আগে থেকেই ঘোষণা ছিল। তারপরও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেষ মুহূর্তে তারা যাত্রা বাতিল করেছে। তাদের কারণে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।”
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) এ বি এম কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে চলাচলকারী ৬২টি ট্রেনের কোনোটিই যাওয়া-আসা করেনি। এগুলোর যাত্রা বাতিল হয়েছে বলা যায়।
রেলের এই অঞ্চলের ডিটিও আনিসুর রহমান বলেন, সকাল থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি। রাত ৮টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়।
আর রাতের বাকি সময়ের ট্রেনগুলোও চলার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার মনিরুজ্জামান।
যাদের যাত্রা বাতিল হয়েছে, কাউন্টার থেকে তাদের টিকেটের টাকা ফেরত দিচ্ছে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে কেনা টিকেটের টাকা অনলাইনেই ফেরত দেওয়া হবে। আর কাউন্টার থেকে কেনা টিকেট কাউন্টার থেকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের দুটিসহ চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ১৪টি আন্তঃনগর, পাঁচটি কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল করে থাকে।
এর বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন নয় জোড়া শাটল, নাজিরহাট রুটে দুই জোড়া, হাটহাজারী ও দোহাজারি রুটে দুটি তেলের ওয়াগন এবং ঢাকার পথে কন্টেইনার ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে।
চট্টগ্রাম থেকে ছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে রয়েছে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস, ঢাকামুখী মহানগর এক্সপ্রেস, মহানগর গোধুলী, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাগামী কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস, ঢাকামুখী সোনারবাংলা এক্সপ্রেস, সিলেটমুখী উদয়ন এক্সপ্রেস, ঢাকামুখী তুর্না এক্সপ্রেস ও চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস।
মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলো হল- ঢাকা মেইল, চট্টগ্রাম মেইল, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, সাগরিকা এক্সপ্রেস ও নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস।
চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই (চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড) থেকে কন্টেইনার, তেলবাহী চারটি ট্রেনও ছাড়তে পারেনি।
চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াইয়ের স্টেশন মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, সোমবার রাত ২টা, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা, বেলা সাড়ে ১২টা ও বেলা ২টায় ট্রেনগুলো ছেড়ে যাবার কথা ছিল। চারটির মধ্যে তিনটি কন্টেইনারবাহী এবং অপরটি তেলবাহী ওয়াগন। এমনিতেই ইঞ্জিন সংকটের কারণে কন্টেইনার পরিবহনে চাপ আছে। এক দিন বন্ধ থাকলে পণ্য ও কন্টেইনারবাহী ট্রেন শিডিউলে সমস্যা হবে।
মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া, নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। সোমবার মধ্যরাত থেকে তাদের কর্মবিরতি শুরু হয়।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ বলতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) বোঝানো হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবি অনেক পুরনো, আগেও আমরা একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছিলাম। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।”