উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড গেইটে আনোয়ারা-চট্টগ্রাম পিএবি সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় মানুষ।
Published : 27 Mar 2025, 03:50 PM
এলাকা থেকে বন্য হাতি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড গেইটে আনোয়ারা-চট্টগ্রাম পিএবি সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় মানুষ।
প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে সড়ক আটকে রেখে ওই বিক্ষোভের ফলে যান চলাচলে অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম থেকে আনোয়ারা ও বাঁশখালীমুখী সড়কটিতে।
কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হতি সরানোর দাবিতে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ করেছে।“
বিক্ষোভকারী স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যা্লয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে কর্ণফুলী উপজেলার শাহ মিরপুর, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ও বড় উঠান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় হাতি তাণ্ডব চালায়। শুক্রবার হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়েসী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।”
কেইপিজেড এলাকার চারটি হাতি এসব তাণ্ডব চালিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, তারা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে এসব হাতি সড়ানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
“শনিবারও আমরা বিক্ষোভ করে দাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু চারদিনেও আমাদের দাবি মানা হয়নি।“
স্থানীয়রা বলেছেন, হাতির দলের তাণ্ডবে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন। ধান ও কলা গাছসহ খাবারের খোঁজে প্রায় রাতেই হানা দেয় হাতি।
ওসি শরীফ বলেন, “স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে কিভাবে হাতি সরিয়ে নেওয়া যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।“
পাশাপাশি হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গত ২২ মার্চ কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে তিনমাস বয়েসী এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার তার মা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “শাহমীরপুরে গভীর রাতে ইব্রাহীমের বাড়িতে একটি বন্যহাতি হানা দেয়। এসময় হাতি শুড় দিয়ে ওই শিশুকে আছড়ে ফেলে বলে স্থানীয়রা আমাদের বলেছে।”
হাতি বনাম মানুষ, কার ঠিকানায় কে?
যেভাবে এল হাতি
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়ন এবং আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে কোরিয়ান এক্সেপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে।
দেয়াং পাহাড় ঘেরা ওই এলাকায় ২০১২-১৩ সাল থেকেই হাতির আনাগোনা বেশি। আগেও হাতির আসা-যাওয়া ছিল, তবে তখন তুলনামূলক কম ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের ভাষ্য।
২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির একটি দল স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়।
কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এবং আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারখাইন, বটতলী ও বারশত; কয়েকটি ইউনিয়নে বেশ কয়েক বছর ধরে হাতির দলটি ‘তাণ্ডব’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরো একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সাথে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি লেজ কাটা হাতি নামে পরিচিত।
কর্ণফুলীতে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছড়ে ফেলে তিন মাসের শিশুকে মারল হাতি