এলাকা থেকে বন্য হাতিটি সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে স্থানীয় লোকজন শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও আনোয়ারার পথে সড়ক অবরোধ করে।
Published : 22 Mar 2025, 01:21 PM
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে তিনমাস বয়েসী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, এ ঘটনার তার মা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুক্রবার রাত দুইটার দিকে বড় উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ জানিয়েছেন।
ওই ঘটনার পর এলাকা থেকে বন্য হাতিটি সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে স্থানীয় লোকজন শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও আনোয়ারার পথে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত শিশুর নাম জাওয়াদ,তার গুরুতর আহত মা খজিমা বেগম (৩০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহমীরপুরে গভীর রাতে ইব্রাহীমের বাড়িতে একটি বন্যহাতি হানা দেয়। এসময় হাতি শুড় দিয়ে ওই শিশুকে আছড়ে ফেলে বলে স্থানীয়রা আমাদের বলেছে।”
স্থানীয় লোকজন আনোয়ারা পিএবি সড়কের কোরিয়ান ইপিজেড গেইটের সামনে অবরোধ করেছেন জানিয়ে ওসি শরীফ বলেন, “অবরোধ উঠানোর জন্য বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনা চলছে।”
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বড়উঠানের দৌলতপুরে হাতির আক্রমণে মোহাম্মদ সৈয়দ ওরফে লুতু মিয়া (৫৫) নামের এক কৃষক নিহত হন।
এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় মো. কাশেম ওরফে দুলাল (৬০) এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খোশাল তালুকদার বাড়ি এলাকায় রেহানা বেগম (৩৮) হাতির আক্রমণে মারা যান।
গত ছয় বছর ধরে চট্টগ্রামের দেয়াং পাহাড়, হ্রদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ হাতির দলটির। তাদের হামলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন জুড়ে তাদের বিচরণ।
ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা হাতিগুলো সরিয়ে নিতে বহুবার বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। নিহত, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়মিত ক্ষতিপূরণও দিচ্ছে বন বিভাগ।
তবে বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের করিডোরে (চলাচলের পথ) কোনো বাধা হাতি সহ্য করতে পারে না। আর পূর্ব পুরুষের আবাসস্থল হওয়ায় ওই হাতির দলটি এ এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে না।
দেয়াং পাহাড় ঘেরা ওই এলাকায় ২০১২-১৩ সাল থেকেই হাতির আনাগোনা বেশি। আগেও হাতির আসা-যাওয়া ছিল, তবে তখন তুলনামূলক কম ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের ভাষ্য।
২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির দলটি স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়।
কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এবং আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারখাইন, বটতলী ও বারশত; এই পাঁচ ইউনিয়নে গত ৬ বছর ধরে হাতির দলটি তাণ্ডব চালাচ্ছে।
শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরো একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সাথে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি লেজ কাটা হাতি নামে পরিচিত।