Published : 01 Apr 2025, 07:07 PM
‘আধিপত্য বিস্তারের জেরে’ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন হামলার শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের বসন্তপুরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান হরিরামপুর থানা ওসি মুহাম্মদ মুমিন খান।
বিল্লাল হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ৫ অগাস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তার ভাই আব্দুর রহমান ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক।
হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন- বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং আজিমনগর ইউনিয়ন বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আফজাল মৃধা (৬৭), একই এলাকার ফারুক (৪৭), নুর হাফেজ (২৫)।
আহতদের মধ্যে চারজনকে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে ফারুক ও নুর হাফেজের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুশান্ত বিশ্বাস।
তিনি বলেন, বাকি দুজন হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
হাসপাতালে আহতরা অভিযোগ করেন, আজিমনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর শিকদার, শামসুদ্দিন শিকদার ও ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের নেতৃত্বে এই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর প্রতিবেশীসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী নেভাতে গেলে তাদের উপরও চাপাতি, কুড়াল নিয়ে হামলা করা হয়।
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আফজাল মৃধা বলেন, “আমি বিএনপি করলে কী হবে? তার পরও জাহাঙ্গীর শিকদার, শামসুদ্দিন শিকদার ও তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করেছে। আমি আগুন নেভাতে গিয়েছিলাম।”
আহত নুর হাফেজ বলেন, “চেয়ারম্যানের বাড়ির আগুন না নেভালে আমগো বাড়িও পুড়ত। আগুন নেভাতে গেলে জাহাঙ্গীর শিকদার, মনিরের লোকজন হামলা করে।”
আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল হোসেনের ভাই এবং ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, “ঈদের দিন আমার বাড়িতে উপজেলা সভাপতিসহ অনেকেই আসেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর রাতেই আমাকে হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর শিকদার, শামসুদ্দিন শিকদার ও যুবলীগ নেতা মনিরের লোকজন। আজ তাদের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের লোকজনকে কোপানো হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে আজিমনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানির হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে আমি আগুন নেভাতে যাই। তখন বিভিন্ন দিক থেকে লোকজন এসে মারধর শুরু করে। আমরা ফেরানোর চেষ্টা করি। আমি বা আমরা কোনো হামলা করিনি।”
ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, “উপজেলা বিএনপির সভাপতি হান্নান মৃধা ভাই, জালালদির শামসুদ্দিন মেম্বার, আমি একটি সামাজিক বিচারে ছিলাম। তখন শুনলাম কে বা কারা বিল্লাল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দিছে, ভাঙচুর করছে। ফেরাতে গিয়ে আমিও আহত হয়েছি। আমার বা আমাদের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং আজিমনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হান্নান মৃধা বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল চেয়ারম্যানের ভাই আব্দুর রহমানও তো আওয়ামী লীগের নেতা। গতকাল বিল্লাল চেয়ারম্যানের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে মিটিং করেছে বলে শুনেছি। আজ কে বা কারা আগুন দিয়েছে। আগুন নেভাতে গেলে আমার দলীয় লোকজন মার খেয়েছে।”
হরিরামপুর থানা ওসি মুহাম্মদ মুমিন খান বলেন, “খবর পেয়ে চরে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”