হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান এক্সে লিখেছেন, “আমিই মারিন।” ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী মাতিও সালভানি লিখেছেন, “আমাদের জোর করে হারানো যাবে না, পুরো গতিতে এগিয়ে যাও বন্ধু!”
Published : 01 Apr 2025, 07:13 PM
ইউরোপীয় তহবিলের অর্থের অপব্যবহারের দায়ে কট্টর ডানপন্থি নেত্রী মারিন লু পেনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি অ্যাখ্যা দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের ডানপন্থি নেতারা।
ইউরোপজুড়ে এখন কট্টর-ডানপন্থি নেতাদের পুনরুত্থান চলছে, সব বিষয়ে একমত না হলেও ওই নেতারা ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী ডান আইকন লু পেনকে ‘তাদেরই একজন’ বলে মনে করেন, লিখেছে বিবিসি।
মারিন লু পেন এই মুহূর্তে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের একজন, যার রাজনৈতিক এজেন্ডা হচ্ছে- ফ্রান্স প্রথম, অভিবাসী বিরোধীতা আর জাতি-বর্ণ-লৈঙ্গিক অধিকারের আন্দোলনকে বাড়াবাড়ি মনে করা।
ফ্রান্সে নিজ দল ন্যাশনাল র্যালি পার্টির (আরএন) কাজে লাগাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল থেকে ২ কোটি ৯০ লাখ ইউরো আত্মসাত করার অভিযোগে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হওয়া মারিন লু পেনকে জরিমানা, কারাদণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচনে দাঁড়ানোর ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার এই রায়ের পরপরই ইউরোপের ডানপন্থি নেতারা লু পেনের পক্ষে নিজেদের সুদৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
এটা যে কেবল আরেক ডানপন্থির প্রতি সমর্থন এমন নয়, প্রচলিত রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন জোরদারের সুযোগও, যা কাজে লাগাতে খুব বেশি দেরি করেননি তারা, বলছেন বিশ্লেষকরা।
লু পেনের ক্ষেত্রে এই রায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হতে তার দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্ক্ষার মৃত্যুঘণ্টাও বাজিয়ে দিতে পারে। জনমত জরিপে তাকে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও আপিলের মাধ্যমে রায় বদলাতে তার হাতে সময় কম, পরের নির্বাচন আর দুই বছরের মধ্যেই।
কট্টর-ডানপন্থি এ নেত্রী এবং তার সহযোগীরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করছেন, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ফ্রান্সে আপিল শেষ হতে কখনো কখনো কয়েক বছরও লেগে যায়।
সোমবার মারিন লু পেনের প্রতি সংহতি জানিয়ে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। লিখেছেন, “আমিই মারিন।”
নেদারল্যান্ডসের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা জনতুষ্টিবাদী গ্রিট উইল্ডারস তার এক্স পোস্টে বলেছেন, তিনি নিশ্চিত লু পেন আপিলে জিতবেন, এবং ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
ইতালির কট্টরপন্থি উপপ্রধানমন্ত্রী মাতিও সালভানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “আমাদের জোর করে হারানো যাবে না, পুরো গতিতে এগিয়ে যাও বন্ধু!”
“যারা ভোটারদের রায়কে ভয় পায় তাদের প্রায়ই আদালতের কাছ থেকে ভরসা চাইতে দেখা যায়। প্যারিসে তারা মারিন লু পেনকে দোষী বানিয়েছে, এবং চাইছে তার রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দিতে,” লিখেছেন তিনি।
রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মানতে নারাজ ফ্রান্সের আদালত। তারা বলছে, তাদের কাজ হচ্ছে বিচার নিশ্চিত করা।
বিএফএমটিভির করা এক জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ ফরাসী মারিন লু পেনের বিরুদ্ধে রায়কে পক্ষপাতহীন বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু ফ্রান্সের ভেতরে-বাইরে লু পেনের সমর্থকরা এমনটা মনে করছেন না। তারা আদালতকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবেই দেখছে।
“ফ্রান্সের লাখ লাখ মানুষ ক্রুদ্ধ,” সোমবার ফরাসী টিভি চ্যানেল টিএফওয়ানকে এমনটাই বলেছেন লু পেন।
এমনকী রাশিয়াও মন্তব্য করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “মারিন লু পেনের পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক রীতিনীতির লঙ্ঘন।”
ফরাসী আদালতের রায় নিয়ে সন্দেহ এসেছে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখ থেকেও।
লু পেনের বিরুদ্ধে রায়কে ‘খুবই জরুরি বিষয়’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার হোয়াইট হাউজে এক স্বাক্ষরে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তিনি এগিয়ে থাকা প্রার্থী, আর তাকেই ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
“মনে হচ্ছে এটা আমাদের দেশ, আমাদের দেশের মতোই মনে হচ্ছে অনেকটা,” জো বাইডেনের সময় তার বিরুদ্ধে চলা আইনি প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন তিনি।
তহবিল আত্মসাৎ: ৫ বছর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না মারিন লু পেন