আদালত তার নির্বাচনে দাঁড়ানোর ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার পাশাপাশি তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ ইউরো জরিমানাও করেছে।
Published : 31 Mar 2025, 05:30 PM
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ দল ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল র্যালিকে (আরএন) দেওয়ার দায়ে ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থি নেত্রী মারিন লু পেন, ইইউ-র সাবেক ৮ আইনপ্রণেতা এবং তাদের ১২ সংসদীয় সহযোগীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ফ্রান্সের এক আদালত।
এর পাশাপাশি লু পেনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা, তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“এটা প্রমাণিত হয়েছে যে এরা সবাই মূলত দলের হয়ে কাজ করেছেন, তাদের (ইইউ) আইনপ্রণেতারা তাদের কোনো কাজই দেননি,” সোমবার আদালতে এমনটাই বলেছেন বিচারক বেনেদিক্ত দ্য পের্তুই।
“তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে এগুলো মোটেই প্রশাসনিক কোনো ত্রুটি নয়, বরং প্রণীত একটি ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে আত্মসাত, যা করা হয়েছে দলের খরচ কমানোর জন্য” বলেন বিচারক।
বেনেদিক্ত যখন এসব বলছিলেন তখন আদালতে সামনের সারিতে বসা লু পেনকে মাথা নাড়তে দেখা যায়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নিজের কট্টর ডানপন্থি দলকে অর্থায়নে ইইউর তহবিল অপব্যবহারের দায়ে ফরাসী এ আদালত লু পেনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছেন।
বিচারক রায় ঘোষণা শেষ করার আগেই মারিন লু পেন আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে থাকা ৫৬ বছর বয়সী লু পেন আগে বলেছিলেন, ২০২৭-এই তিনি শেষ বারের মতো লড়বেন।
নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলেও লু পেনের পার্লামেন্টারি আসন তারই থাকছে।
লু পেন, তার দল আরএন এবং তাদের দুই ডজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ইইউ পার্লামেন্টের তহবিল থেকে ৪০ লাখ ইউরোর বেশি অর্থ দিয়ে তারা ফ্রান্সে থাকা দলের কর্মীদের বেতনভাতা দিয়েছেন।
তবে আরএনের দাবি, তারা বৈধ উপায়েই ওই অর্থ ব্যবহার করেছে এবং অভিযোগগুলোতে সংসদীয় সহযোগীর কাজকে সঙ্কীর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
আদালত বলছে, এই পুরো অর্থ আত্মসাত প্রক্রিয়ার ‘কেন্দ্রে’ ছিলেন লু পেন।
নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছে আদালত, এর মধ্যে দুই বছরের দণ্ডাদেশ থাকবে স্থগিত। এসবের পাশাপাশি ১ লাখ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে এই মুহূর্তে ফরাসী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সবচেয়ে বড় দলের সংসদীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করা লু পেন।
সোমবার আদালতে ঢুকতে বা বের হতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি পেন। তবে এর আগে তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, সরকারি কৌঁসুলিরা তার ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’ এবং আরএন-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চাইছে।
দোষী সাব্যস্ত হলেও এখনই সব দণ্ড কার্যকর হচ্ছে না, লু পেন এবং অন্যরা আপিলের সুযোগ পাবেন। তবে ফ্রান্সে আপিল আবেদনের সুরাহা হতে কখনো কখনো কয়েক বছরও লেগে যায়।
এ রায়ের ফলে ফ্রান্সের রাজনীতিতে আদালতের হস্তক্ষেপের সীমা নিয়ে আলোচনা নতুন করে চাঙা হবে বলে অনুমান করছেন বিশ্লেষকরা।
লু পেন না দাঁড়াতে পারলে তার ডান হাত খ্যাত আরএনের প্রেসিডেন্ট ২৯ বছর বয়সী জগদান বাগদেলাই ডানপন্থিদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক হলেও পুরো ডানপন্থি অংশের ভোট তিনি পকেটে পুরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে।